Sunday, July 25, 2021

নিমতিতা রাজবাড়ি। Nimtita Rajbari, Murshidabad

 ধ্বংসের প্রতীক্ষায় দিন গুনছে নিমতিতা রাজবাড়ি।

সত্যজিৎ রায় তাঁর 'জলসাঘর' (১৯৫৭), 'দেবী' (১৯৫৯), 'সমাপ্তি' (১৯৬০) সিনেমার শুটিং করতে এসেছিলেন এই রাজবাড়িতে।

২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়া 'আলিনগরের গোলকধাঁধা' সিনেমার প্রথম দৃশ্যও এই রাজবাড়িটির সামনেই শ্যুটিং হয়েছে। রাজবাড়ির চাকচিক্য ও জাঁকজমক মন কেড়ে নিয়েছিল সিনেমাপ্রেমী মানুষের। আজ মুর্শিদাবাদ জেলার সূতীর নিমতিতার সেই রাজবাড়ি আভিজাত্যের জৌলুস হারিয়ে শুধু কঙ্কালসার জীর্ণদশা নিয়ে গঙ্গানদীর দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে প্রহর গুনছে ধ্বংসের। মাথার উপরের ছাদ ভেঙে আকাশ উঁকি দিচ্ছে ঘরে। কড়িকাঠের বর্গাগুলো দখল নিয়েছে ঘুণপোকা। দেওয়া থেকে খসে পড়েছে চুনসুরকি বালি।

একদা গৌরসুন্দর চৌধুরী ও দ্বারকানাথ চৌধুরী দুই ভাই মিলে এই বাড়িতে জমিদারী কাজ শুরু করেন ১৮৫৫ সালে। দ্বারকানাথের ছেলে জ্ঞানেন্দ্রনারায়ণের বিয়ের সময় কলকাতার স্টার থিয়েটার গ্রুপকে নাট্য অভিনয় করার জন্য নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল। বিখ্যাত অভিনেতা ক্ষিরোদপ্রাসাদ বিদ্যা বিনয় তাঁর নাট্যগোষ্ঠী নিয়ে নিমতিতার রাজবাড়িতে এলে দ্বারকানারায়ণের পুত্র মহেন্দ্রনারায়ণ রাজবাড়িতে নিমতিতা রঙ্গমঞ্চ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রতি বছর হোলির সময় নাটক মঞ্চস্থ হোত। বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব শিশির ভাদুরী এই রাজবাড়ির মঞ্চে অভিনয় করে গেছেন। বাংলার সাংস্কৃতিক মানচিত্রে মহেন্দ্রনারায়ণের প্রচেষ্টায় নিমতিতা খ্যাতি অর্জন করেছিল সেইসময়। ১৯৪৩-৪৪ সালের বন্যায় রঙ্গমঞ্চটি বিলুপ্ত হয়ে যায়।

এখন রাজবাড়ির দিকে তাকালে তার অবস্থা দেখে বুক টা গুমরে কেঁদে ওঠে।

এর আগে একটি লিখাতে আপনাদের চার "বাংলা মন্দির" এর কথা বলেছিলাম আশা করি সবাই পড়েছেন। 

এই ভাবেই একে একে বাংলা তথা ভারতবর্ষের ঐতিহাসিক নিদর্শন/ পর্যটন কেন্দ্র গুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। 

আর কতদিন এই ভাবে রাজবাড়ি টি দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে ঠিক নাই, যদি ঐতিহাসিক নানান সাক্ষী বহনকারী এই রাজবাড়িটি চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করতে চান তবে চলে আসুন দূর্গা পূজার অষ্টমীর দিন। 

শুধু মাত্র দূর্গা পূজাতেই এটি খোলা থাকে। আর অষ্টমীর দিন বেশ জমজমাট ভিড় লক্ষ্য করা যায়। আর সারা বছর তালা বন্ধ থাকে।

Thursday, May 6, 2021

Kathgola: kathgola place owner, kathgola place history in bengali, kathgola bagan bari

কাঠগোলা বাগানবাড়ি 


মুর্শিদাবাদ জেলার লালবাগে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্র হলো এই কাঠগোলা বাগানবাড়ি। 

রাস্তার পাশেই একটি বিশালাকার সিংহদ্বার।

সেই দ্বারের ভেতরে প্রবেশ করতেই দুই ধারে অগনিত গাছ আর তার মধ্যেই কিছু ঐতিহ্যবাহী  স্তম্ভ আর কিছু অশ্বারোহী মূর্তি। মধ্যের সরু রাস্তা ধরে কয়েক পা এগোতেই দেখা যায় টিকিট কাউন্টার। সেখানে টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। মুখ্য বাড়িটি পৌঁছাবার আগেই বাম দিকে গুপ্ত সুড়ঙ্গ আর ডান দিকে চিড়িয়াখানা। এবার কাঠগোলা বাগান বাড়ির সামনে উপস্থিত হওয়া যাক। 

বাড়িটির সামনেই একটা বিশাল পুকুর। পুকুরটির চারকোনে ও বাড়ির সামনে এবং তার বিবরীত পাড়ে সুন্দর ভাবে মোট ছয়টি ঘাট বাঁধানো। বাড়ির সামনের ঘাটটিতে একটি সুন্দর ফোয়ারা। সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামতেই পুকুরে দেখা যায় রঙ - বেরঙের মাছ জলে খেলা করছে। এই মাছ গুলো খাওয়া হয় না। আর এগুলোর মধ্যে যদি কোনো মাছ মারা যায় তাহলে তাকে কবর দেওয়া হয়। নবাবী আমল থেকেই চলে আসছে এই রীতি। বাড়িতে প্রবেশ করতেই যদি কিছু  চেনা চেনা লাগে তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই, এখানে অনেক সিনেমার শ্যুটিং হয়েছে। এই ঐতিহাসিক বাড়িটির গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো হলো - কষ্টিপাথরের সিংহাসন, ১৮ ফুট উঁচু বেলজিয়াম আয়না, ৭৫ ফুট উঁচু বিনা স্তম্ভের কাঠের সিঁড়ি, মার্বেল টেবিল...  ও হ্যাঁ এখানে যে মার্বেল টেবিল আছে তার সঙ্গে তাজমহলের মার্বেলের মিল পাওয়া যায়।

মুখ্য বাড়িটি থেকে বেড়িয়ে পূর্ব দিকে  হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে গেলে দেখা যাবে ওখানে সামান্য উঁচু স্টেজের মতো হয়ে আছে ওটাকে জলসাঘর বা নাচমহল বলে। এখানে প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা নাচের আসর বসতো। ততকালীন নবাবী লোকেরা, ইংরেজ সাহেবরা ও ধনী ব্যাবসায়ী রা এখানে আসতেন । মনোরঞ্জনের জন্য  দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু নর্তকী কে নিয়ে আসা হতো এখানে। তখনকার ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায় তাদের মধ্যে একজন ছিলেন হীরা বাঈ। সে নাকি প্রতি সন্ধ্যায় নাচ করার জন্য ৫০০০ মুদ্রা নিতো। তার একটি বিশাল ছবি হাজারদুয়ারী তে টাঙ্গানো আছে। নাচ মহল থেকে দুই ধারে গোলাপের বাগান ছাড়িয়ে এগিয়ে গেলে সামনের দিকে একটু এগোতেই একটা ছোট স্তম্ভ লাগোয়া দুই ধারে দুটো মাছের মূর্তি দেখা যায়। 

এখানেই মাছেদের কবর দেওয়া হয়। 

তার কিছু দূরে চোখে পড়ে একটি মন্দির। এই মন্দিরের ভেতরে মোবাইল ব্যাবহারে নিষেধাজ্ঞা আছে। এই মন্দিরে প্রবেশ করার পূর্বে সবাই কে কথা বলতেও বারন করা হয়। তবে ধর্ম - বর্ণ নির্বিশেষে সকল পর্যটকদেরই এখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়।

নবাব দের বাগানবাড়ি তে মন্দির কিভাবে এলো এটি আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে। বলে রাখি এটি নবাবদের তৈরী নয়। রাজস্থান থেকে আগত এক ব্যাবসায়ী এটি নির্মাণ করান। তিনি ছিলেন জৈন ধর্মাবলম্বী, তাই এই মন্দিরটিও জৈন মন্দির। মন্দিরটি আদিনাথ মন্দির বা পরেশনাথ মন্দির নামে পরিচিত। আদিনাথ হলো জৈন ধর্মের প্রথম তীর্থঙ্কর ঋষভনাথের আরেক নাম। মন্দির টি প্রথম থেকে এখানে ছিলো না ১৮৭৩ সালে তৎকালীন বাড়িটির মালিক তার মায়ের ইচ্ছা তে এটি বানান। আর এই বাগানবাড়ি টি তৈরী করান বর্তমান জিয়াগঞ্জ শ্রীপত সিং কলেজের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীপত সিং দুগরের পূর্বপুরুষ লক্ষীপত সিং দুগর (১৭৮০-১৭৮২ সালের মধ্যে) । তারা চার ভাই ছিলেন - লক্ষীপত সিং দুগর, ধনপত সিং দুগর, মহীপত সিং দুগর ও জগপত সিং দুগর। তারা এখানে ব্যাবসার সূত্রে এসেছিলেন। বিভিন্ন কাঠের ব্যবসা করার জন্য ও প্রচুর পরিমাণে গোলাপের চাষ হবার কারণে এর নাম দেওয়া হয় কাঠগোলাপ বাগান। পরে মানুষের মুখে মুখে এটি কাঠগোলা বাগানবাড়ি নামে খ্যাতি অর্জন করে।  এখানে এসে তখনকার সব থেকে ধনী ব্যাবসায়ী জগৎ শেঠের সঙ্গে তাদের ভালো সম্পর্ক হয়। সেই সুবাদেই তৎকালীন নবাবের কাছে মাত্র ১২০০ টাকায় ২৫০ বিঘা জমি কিনে নেন। তার পরই তৈরী করান এই বাগান বাড়ি টি। সিংহদ্বার দিয়ে প্রবেশের পরে পরেই যে চারজনের অশ্বারোহী মূর্তি দেখা যায় সেগুলো এদের ই চার ভাইয়ের। বর্তমানে লক্ষীপত সিং দুগরের দশম প্রজন্ম সঞ্জয় সিং দুগর ও সিদ্ধার্থ সিং দুগর এই প্রাসাদটির দেখাশোনা করেন। তারা বর্তমানে কলকাতায় থাকেন। আসার সময় মুখ্য বাড়িটির পিছনে যে ভগ্নাবশেষ টি দেখা যায় সেটা অতীতে অতিথিশালা ছিলো। বাড়িটির সামনে যে পুকুর টা আছে তার বিপরীত পাড়ে এলে সেখান থেকে বাড়িটির অসাধারণ দৃশ্য চোখে পড়ে। আহা! কি সুন্দর দৃশ্য মন জুড়িয়ে যায়। 



এবার আসা যাক সুড়ঙ্গের কথায়। এখানকার গুপ্ত সুড়ঙ্গ টি ইংরেজদের চোখে ধুলো দিয়ে লুকিয়ে ব্যাবসা করার জন্য বানানো হয়েছিলো। এই সুড়ঙ্গ টি সরাসরি চলে যায় এখান থেকে প্রায় চার কিমি দূরে জগৎ শেঠের বাড়ি। এই সূত্রে বলে রাখা ভালো জগৎ শেঠের পুরোনো এবং বড়ো বাড়িটি কিন্তু গঙ্গা নদীর তলায় তলিয়ে গেছে। আর তাই এই সুড়ঙ্গ টি সবসময় জলমগ্ন থাকে। এমনকি গঙ্গা নদীর জল বাড়লে এই সুড়ঙ্গের জলস্তর ও বারে আর কমলে কমে। জগৎ শেঠের যে বাড়িটা নদীর গর্ভে তলিয়ে গেছে তার তুলনায় এখন যে বাড়ি টি বর্তমান সেটি খুবই ছোট।

চলুন এবার চিড়িয়াখানায় সম্পর্কে কিছু জানা যাক।

কয়েক বছর আগে পর্যন্ত  চিড়িয়াখানা টাও ঐ অতিথিশালার মতো ভগ্নাবশেষ হয়ে পড়েছিলো ইদানীং এটিকে ঠিক করা হয়েছে। আগে যখন চিড়িয়াখানাটা ঠিক ছিল তখন এখানে বাঘ, সিংহ বা কোনো মাংষাষী পশু রাখা হতো না। কারন এদের রাখলে তাদের মাংস খেতে দিতে হবে,  আর জৈন রা তাদের বাড়ির চৌকাঠে পর্যন্ত মাংসের স্পর্শ পড়তে দেয় না।

 ভিতরে গিয়ে দেখতে পাবেন সুন্দর সুন্দর পাখি। বিভিন্ন দেশের পাখি আছে সেখানে, এমনকি উট পাখিও আছে। এছাড়াও খরগোস, বিভিন্ন মাছ, হাঁস বিভিন্ন প্রাণী আছে ।


(লিখেছেন- বিমান চন্দ্র দাস । ভুল ত্রুটি হলে জানাবেন আমরা সেটি বিবেচনা করে দেখবো ।

কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন ।

নমস্কার 🙏)

Monday, May 3, 2021

Char Bangla Temple / Char bangla Mondir/ Baranagar/Murshidabad/ Azimganj/Jiyaganj

বড়নগর / চার বাংলা মন্দির / মুর্শিদাবাদের বারাণসী / রানী ভবানীর ইতিহাস 

(Scroll down and read English Language)



বড়নগর, মুর্শিদাবাদ জেলার আজিমগঞ্জ শহর লাগোয়া একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান। 

'আজিমগঞ্জ সিটি' রেল স্টেশন থেকে উত্তর দিকে মাত্র 1 কিলোমিটার দূরেই এই বরানগর। উত্তরবঙ্গ বা দক্ষিণবঙ্গ থেকে রেল ও সড়ক উভয় পথেই আসা খুব সহজ। 


অষ্টাদশ শতকে মুর্শিদাবাদের বারাণসী বলা হতো এই বড়নগরকে। আগে বড়নগর রাজশাহী জমিদারীর অন্তর্গত ছিল এবং তখন এখানেই জমিদারীর সদর দপ্তর ছিল। রাজা উদয়নারায়ণের মৃত্যুর পর রাজশাহী জমিদারীর মালিক হয় নাটোর রাজবংশ।  1730 সালে রামজীবনের মৃত্যুর পর এই বিশাল জমিদারীর মালিকানা পান রামকান্ত ও তাঁর স্ত্রী রাণী ভবানী । রাজশাহী জেলার ছাতিম গ্রামের আত্মারাম চৌধুরীর কন্যা ছিলেন রাণী ভবানী। রামকান্ত ছিলেন সৎ, ধার্মিক এবং উদার মনের ব্যক্তি  । তিনি বেশিরভাগ সময় পূজা পাঠে -ই ব্যায় করতেন তাই তার অভিজ্ঞ দেওয়ান দয়ারাম জমিদারীর সব কাজ পরিচালনা করতেন। 1748 সালে  রামকান্ত মারা যান। রাণী ভবানীর বয়স তখন মাত্র 32 বছর ছিল তখন থেকেই জমিদারীর দায়-ভার গ্রহণ করেন তিনি। প্রজাদের অভাব অভিযোগ খুঁটিয়ে দেখে তার প্রতিকার করতেন ।জনসাধারণের জন্য তিনি যে সকল কাজ গুলি করেছিলেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জলের সমস্যার জন্য পুকুর খনন, ধর্মশালা নির্মাণ , শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ , রাস্তা নির্মাণ প্রভৃতি। বহু ধার্মিক হিন্দু ও মুসলিমদের নিষ্কর জমি দান করেছেন রাণী ভবানী।


 বড়নগর, ভবানীপুর, বেনারস ও নাটোরে তৈরী করেছিলেন বছু দেবমন্দির। রানী ভবানীর লক্ষ্য ছিল তার রাজধানী কে প্রাচীন বারাণসীর মতো শহর হিসেবে গড়ে তোলার। 1753 থেকে 1760 -এর মধ্যে তিনি এই সকল মন্দির গুলি নির্মাণ করান।  স্থানীয়দের মতে তিনি বড়নগরে শিবকে উৎসর্গ করে 108 টি মন্দির নির্মাণের ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। কেউ কেউ বলেন তিনি 107 টি নির্মাণ করতে পেরেছিলেন, আবার কেউ কেউ বলেছিলেন যে তিনি 108 টি মন্দির -ই স্থাপনা করান। যার মধ্যে অনেক মন্দির ভাগীরথীর গর্ভে তলিয়ে যায়। তিনি এই সব মন্দিরের পরিচালনার জন্য দান করেছে প্রচুর ভূ-সম্পত্তি। দান ও জনসেবার জন্য এই হিন্দু রানী ইতিহাসে চিরস্মর হয়ে আছেন।


এখানে নির্মিত মন্দির গুলির মধ্যে ভবানেশ্বরী মন্দির টি সব থেকে বড়। এটি একটি অষ্টকোনাকৃতি মন্দির। এর আটটি দরজা আছে এবং মন্দিরের গায়ে টেরাকোটার কাজ লক্ষনীয়। এই মন্দিরে ভবানীশ্বর নামে এক শিবলিঙ্গ বিরাজমান। 

রানী ভবানীর নির্মিত মন্দির গুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ হলো চার বাংলা মন্দির। মন্দিরটি চার দিকে চারটি বাংলো বিশিষ্ট হওয়ায় এরূপ নামকরণ। 

কোনো কোনো জায়গায়  এক বাংলা বা দুই বাংলা মন্দির লক্ষ্য করা গেলেও চার বাংলা মন্দির প্রায় অমিল তাই এর পৌরাণিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। এই মন্দির গুলির গায়ে টেরাকোটার কাজ দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পূর্ব - পশ্চিম - উত্তর - দক্ষিণে  চারটি মন্দিরের সমষ্টি এই চার বাংলা মন্দিরের প্রত্যেকটি তে 3 টি করে খিলান যুক্ত দরজা রয়েছে এবং প্রতিটি দরজার সামনে একটি করে শিবলিঙ্গ বিদ্যমান।  অর্থাৎ চারটি মন্দিরে মোট 12 টি শিবলিঙ্গ রয়েছে। এই মন্দির গুলির গায়ে টেরাকোটার কাজের মাধ্যমে বিভিন্ন পৌরাণিক কাহীনি ফুটে উঠেছে। 


চার বাংলা মন্দির থেকে অনতি দূরেই আছে রাজ রাজেশ্বরী মন্দির। এই মন্দির বংশানুক্রমে ব্যক্তি মালিকানা সম্পত্তি, তবে বর্তমানে স্থানীয় বাসিন্দারা উত্তরাধিকারীর কাছে অনমতি নিয়ে একটি ট্রাস্ট গঠন করে দেখভাল করেন। 

এর ভেতরে দেখা যায় রাজ রাজেশ্বরী দেবী, শ্রী শ্রী জয় দুর্গা দেবী ও করুনাময়ী দেবীর বিগ্রহ। এছাড়া প্রায় 300 বছরের পুরোনো অখণ্ড নিম কাঠে খোদাই করে বানানো মদনমোহন, মহালক্ষী ও রাধা দেবীর মূর্তি। 


বড়নগরের আরো একটি উল্লেখযোগ্য মন্দির হলো জোড়বাংলা মন্দির বা গঙ্গেশ্বর শিবমন্দির। এই মন্দির টি বর্তমানে পুরাতত্ত্ব বিভাগের আওতায় নাম মাত্র দেখাশোনা করা হয়। এটি এক জোড়া মন্দিরের সমষ্টি বলে এর নাম জোড়া বাংলা মন্দির। এই মন্দিরের ভেতরেও তিনটি শিবলিঙ্গ দেখা যায়। এই মন্দিরের গায়েও টেরাকোটার কাজ মন কাড়ে। 



এছাড়াও এই অঞ্চলে বিভিন্ন স্থানে বহু মন্দিরের ভগ্নাবশেষ জরাজীর্ণ অবস্থায় পরে থাকতে দেখা যায়, যেগুলি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আজ বিলুপ্ত প্রায়। 


(লিখেছেন - বিমান চন্দ্র দাস। কোনো ভুল ত্রুটি হলে কমেন্টে জানাবেন, বিবেচনা করে দেখা হবে। নমস্কার 🙏)