বালিঘাটা আদি বারোয়ারি দুর্গাপুজো ||
বালিঘাটা,রঘুনাথগঞ্জ,মুর্শিদাবাদ ||
∆ প্রায় ৪০০ বছর পূর্বে অবিভক্ত ভারতের বাংলা প্রদেশে নিজ ভাগ্য অন্নেষণে এসেছিলেন শ্রী হরিনারায়ণ মিশ্র। নিষ্ঠাবান শাক্ত বংশীয় ব্রাহ্মণ হরিনারায়ণ সাথে এনেছিলেন অষ্টধাতুর কুলদেবী বিগ্রহ শ্রী শ্রী সিংহবাহিনী।
বালিঘাটাতে সেই সময় ছিল নাটোর রাজবাড়ির কাছারি। সেই কাছারি ঘরে হরিনারায়ণ কর্ম সংস্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। হরিনারায়ণের পুত্র শ্রী কালীপ্রসন্ন মিশ্র যুবা বয়সে পিতার কর্মভার গ্রহণ করলে, হরিনারায়ণ সস্ত্রীক পুনরায় মিথিলা ফিরে যান ।
হরিনারায়ণ এর পর কালিপ্রসন্নের তত্ত্বাবধানে শ্রী শ্রী সিংহবাহিনী পুজা চলতে থাকে।
কালক্রমে, কালীপ্রসন্নর পুত্র শ্রী অনন্ত লাল মিশ্রর হাতে পুজার দায়িত্ব পরে। কিন্তু অনন্তলালের ব্যবহারিক তথা চারিত্রিক দিক ঠিক ছিল না । পুত্রের জীবন যাত্রায় বিব্রত বোধ করে কালীপ্রসন্ন সস্ত্রীক মিথিলাতে ফিরে যান | এবার শুধু সস্ত্রীক নয় কুলদেবীর অষ্টধাতুর বিগ্রহটিও নিয়ে চলে যান মিথিলাতে।
ততদিনে বালিঘাটা বাসীর হৃদয়ে সিংহবাহিনীর জন্য আলাদা স্থান হয়ে গেছে। সিংহবাহিনীর অবর্তমানে বালিঘাটাবাসী অনন্তলাল মিশ্রের কাছে সিংহবাহিনীর বেদিতে মৃন্ময়ী প্রতিমা পুজা প্রতিষ্ঠার আবেদন জানায়
সেই মতো তিন বছর অনন্তলাল মৃন্ময়ী পুজা চালান। এই সময় পুজার সংকল্প হতো শ্রী রামচন্দ্রের নামে।
পরবর্তীতে তাঁর আর্থিক অবস্থার অবনতির ফলে তিনি এখানকার বাড়ি,পুকুর,স্থাবর সম্পত্তি সব দান ও বিক্রি করে দিয়ে মিথিলাতে চলে যান । কিন্তু দুর্গাপুজার কোনো ব্যবস্থা করে উনি যেতে পারেননি ।
সেই সময় জনৈক রজনীকান্ত ঘোষ নিজ তত্ত্বাবধানে ও বালিঘাটা বাসীর সহায়তায় তিন বছর পুজা চালান, তাঁর পরবর্তী থেকে এই পুজা সম্পূর্ণ বারোয়ারি পুজার রূপ পায় প্রায় ৩০০ বছর পূর্বে ।
প্রাচীন জীর্ণ ভগ্নপ্রায় মন্দিরের পুনরুদ্ধার হয় ২০১৫ সালে । আশ্চর্যের বিষয় ৪৪ফুট উচ্চতার চূড়া বিশিষ্ট সুবিশাল এই মন্দির শুধু ভিক্ষা নির্ভরতায় নির্মিত হয়েছে এবং এত সুবিশাল মন্দির মাত্র ৮মাসের মধ্যেই সম্পূর্ণ হয়েছে । মায়ের কৃপা ছাড়া তা সম্ভব নয়। (নব্য মন্দির প্রতিষ্ঠা দিবস - ২৬ সেপ্টেম্বর,২০১৫) | মা এখানে শ্রী শ্রী ভোটেশ্বরী নামে বিখ্যাত | বর্তমানে পুজোয় নবীনকরণ হলেও ঐতিহ্য বজায় রয়েছে এবং প্রত্যেক বছর শিল্পী শ্রী বিশ্বরূপ পালের হাতে ডাকের সাজে সেজে ওঠেন মা |
এছাড়া প্রতিবছর পুত্র প্রাপ্তি, রোগ নিরাময় প্রভৃতির জন্য বহু মানুষ মানসিক করেন । মা সব পূর্ণ করেন ।
আদি বারোয়ারির এই পুজোয় বলিদান নীতি পালিত হয়। কিন্তু আদি বারোয়ারির পুজোয় সপ্তমী,সন্ধি,নবমীতে ছাগ বলি, মেষ বলি, আখ বলি,কুমড়ো বলি ও কলা বলি দেওয়া হয় । মায়ের অন্নের ভোগ হয়না । লুচির ভোগ এখানকার রীতি।
মহাষষ্ঠীর সন্ধ্যায় আমন্ত্রণ ও অধিবাস ক্রিয়ার পর মহাসপ্তমীর শারদ প্রভাতে নবপত্রিকা স্নানের শোভাযাত্রা অন্যতম। একাদশীর সন্ধ্যাতে মায়ের বিসর্জন শোভাযাত্রা তে প্রচুর লোক সমাগম হয় । হাজার হাজার ভক্তের ভিড়ে "আসছে বছর আবার হবে" ধ্বনি তে সৃষ্টি হয় রঘুনাথগঞ্জের সবচেয়ে বড়ো দুর্গা বিসর্জন শোভাযাত্রা। প্রাচীন ঐতিহ্য, ভক্তি, উৎসব এর সংমিশ্রণে বালিঘাটা আদি বারোয়ারি দুর্গাপুজা সত্যই রঘুনাথগঞ্জের পুজা ইতিহাসের ধ্রুব তারা।
প্রতিবছর একাদশীর দুপুরে এই মন্দিরে শ্রী শ্রী ভগবতীর সামনে মা পেটকাটির ঘট রেখে বিশেষ পুজো হয় । জনশ্রুতি মা পেটকাটি ও ভগবতী দুই বোন, পুর্বে দশমীর রাতে দুজনের একসাথে বাহিচ হত। তবে বর্তমানে পরিস্থিতির কারণে তা আর হয়না।
No comments:
Post a Comment