জীবন সায়াহ্ণে
হৃদয় হরণ = বিমান চন্দ্র দাস
ফাল্গুন মাসের হালকা শীতের মধ্যে রঘুনাথগঞ্জ ফুলতলায় অটোরিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে আছি । সালটা 2030 শনিবার, হঠাৎ এক 16- 17 বছরের যুবতী আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল "সেলাম ম্যাম" । আমি কিছুক্ষনের জন্য 'থ' হয়ে গেলাম , মুখটা খুব চেনা মনে হচ্ছিল কিন্তু ঠাউরে উঠতে পারছিলাম না । কয়েক সেকেন্ড পর আমার মুখ ফুটলো- কে বলোতো ?আমি ঠিক চিনতে পারলাম না ... ম্যাম আমি আফসানা । নামটা শোনা মাত্র আমার মস্তিষ্কে জীবনের পুনরাবৃত্তি ঘটলো কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে । সেগুলো চেপে রেখে বললাম আরে আফসানা কত বড়ো হয়েছিস, কেমন আছিস, এখানে একা কি করছিস? এত গুলো প্রশ্ন শুনে সে বলল আস্তে ম্যাম আস্তে সব বলছি। হঠাৎ দেখি অটোরিকশা এসে দাঁড়ালো কিন্তু পরের টা ধরবো বলে ছেড়ে দিলাম । সত্যি বলতে কি আমিও চাইছিলাম ওর সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটাতে। সেই ছোট্ট বেলায় আমার কাছে পড়তে আসতো। হঠাৎ কানে ভেসে উঠলো ম্যাম আপনি বাড়ি যাবেন তো? আমি বললাম হ্যাঁ আর তুই? হ্যাঁ ম্যাম আমিও যাবো ঐ ত আমার বান্ধবী চলে এসেছে আমরা একসঙ্গে এসেছি। আমি বললাম চল তাহলে একই অটো তে যাওয়া যাক। হ্যাঁ ম্যাম চলুন ।
অটো তে আসতে আসতে সে অনেক কথা বললো আমাকে। তারা পুরনো বাড়ি থেকে চলে গিয়ে খুব একটা ভালো নেই । রোজ বাবা মায়ের অশান্তি তার মধ্যে আবার তার নাকি বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। সব মিলিয়ে তার মনটা খুব খারাপ , তবুও আমার সঙ্গে কথা বলার সময় তার মুখের দিকে তাকিয়ে বোঝার উপায় ছিল না যে তার মন খারাপ । আমাকে অনেক দিন পর সামনে পেয়ে এতটাই খুশি ছিল সে। হ্যাঁ অনেক দিন, তা প্রায় 10 বছরের বেশি সময় হয়ে গেছে ।
সে তার বিয়েতে বার বার করে আসার জন্য কাকুতিমিনতি করতে লাগলো। আমি বললাম ঠিক আছে যাবো। আমার বাড়ি পৌঁছানোর আগের স্টপে সে নামলো। নামার সময় তার পূর্ণিমার চাঁদের মত মুখটা যেন ম্লান হয়ে এলো। জানি না কোথা থেকে আমার চোখেও একবিন্দু জল এসে হাজির হলো । তাড়াতাড়ি সেটা মুছে ফেললাম যাতে অন্যান্য যাত্রীরা দেখতে না পায় । বাড়ি এসে মুখ হাত ধুয়ে একটু পুরনো স্মৃতি গুলো মনে পড়তে লাগলো। ফুলতলায় যেই আবেগ টা চেপে রেখেছিলাম সেটা বাড়ি এসে আর পারলাম না । সব একে একে মনে পড়তে লাগল । বিছানায় হেলান দিয়ে বসতেই আমার মেয়ে এসে বললো মা কি হয়েছে? আমি বললাম কিছু না যাও খেলো। মেয়ের বয়স 6 বছর । হ্যাঁ ঠিক এই বয়সেই সবাই পড়তে আসতো আমার কাছে । 10 বছর আগের কথা, কতোই না সুন্দর ছিল দিন গুলো সুখ দুঃখ, হাসি কান্না, সব মিলিয়ে ভালোই কাটতো। মাঝে মাঝে বন্ধু বান্ধবী দের সাথে ফোনে কথা আর আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের কথা না হয় বাকিই থাক। আমার জীবনের গল্প যতদিন বেঁচে থাকবে তার গল্প ও ততোদিন চলতে থাকবে । স্কুলে ফেলে আসা স্মৃতি , আহিরন হল্ট, আজিমগঞ্জ জংশন, নিমতলা ফেরিঘাট, শ্রীপত সিং কলেজ, উফ্ফ কি দিন ছিলো সেই সব। সংসারের বেড়াজালে আটকে ফুরসত ই পায় না দিন গুলো মনে করার। আজ আফসানা সব মনে করিয়ে দিলো। সত্যি স্মৃতি খুব কাঁদায়। চোখের জল ধরে রাখতে পারছি না । তখন 2020 সাল ছিল, সেই বছরই পরিস্থিতির কারণে আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের সঙ্গে কথা কমে যেতে থাকে । কিন্তু মনের মধ্যে ভালোবাসা টা এখনো একইরকম আছে । আজ আবার অনেক দিন পর ফিরে দেখা যাক সেই দিন গুলো । একে একে সবাই কে ফোন করে দেখি সবাই কেমন আছে। আমি জানি কেউ ফোন ধরুক বা না ধরুক আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ধরবেই ...........
হৃদয় হরণ = বিমান চন্দ্র দাস
ফাল্গুন মাসের হালকা শীতের মধ্যে রঘুনাথগঞ্জ ফুলতলায় অটোরিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে আছি । সালটা 2030 শনিবার, হঠাৎ এক 16- 17 বছরের যুবতী আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল "সেলাম ম্যাম" । আমি কিছুক্ষনের জন্য 'থ' হয়ে গেলাম , মুখটা খুব চেনা মনে হচ্ছিল কিন্তু ঠাউরে উঠতে পারছিলাম না । কয়েক সেকেন্ড পর আমার মুখ ফুটলো- কে বলোতো ?আমি ঠিক চিনতে পারলাম না ... ম্যাম আমি আফসানা । নামটা শোনা মাত্র আমার মস্তিষ্কে জীবনের পুনরাবৃত্তি ঘটলো কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে । সেগুলো চেপে রেখে বললাম আরে আফসানা কত বড়ো হয়েছিস, কেমন আছিস, এখানে একা কি করছিস? এত গুলো প্রশ্ন শুনে সে বলল আস্তে ম্যাম আস্তে সব বলছি। হঠাৎ দেখি অটোরিকশা এসে দাঁড়ালো কিন্তু পরের টা ধরবো বলে ছেড়ে দিলাম । সত্যি বলতে কি আমিও চাইছিলাম ওর সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটাতে। সেই ছোট্ট বেলায় আমার কাছে পড়তে আসতো। হঠাৎ কানে ভেসে উঠলো ম্যাম আপনি বাড়ি যাবেন তো? আমি বললাম হ্যাঁ আর তুই? হ্যাঁ ম্যাম আমিও যাবো ঐ ত আমার বান্ধবী চলে এসেছে আমরা একসঙ্গে এসেছি। আমি বললাম চল তাহলে একই অটো তে যাওয়া যাক। হ্যাঁ ম্যাম চলুন ।
অটো তে আসতে আসতে সে অনেক কথা বললো আমাকে। তারা পুরনো বাড়ি থেকে চলে গিয়ে খুব একটা ভালো নেই । রোজ বাবা মায়ের অশান্তি তার মধ্যে আবার তার নাকি বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। সব মিলিয়ে তার মনটা খুব খারাপ , তবুও আমার সঙ্গে কথা বলার সময় তার মুখের দিকে তাকিয়ে বোঝার উপায় ছিল না যে তার মন খারাপ । আমাকে অনেক দিন পর সামনে পেয়ে এতটাই খুশি ছিল সে। হ্যাঁ অনেক দিন, তা প্রায় 10 বছরের বেশি সময় হয়ে গেছে ।
সে তার বিয়েতে বার বার করে আসার জন্য কাকুতিমিনতি করতে লাগলো। আমি বললাম ঠিক আছে যাবো। আমার বাড়ি পৌঁছানোর আগের স্টপে সে নামলো। নামার সময় তার পূর্ণিমার চাঁদের মত মুখটা যেন ম্লান হয়ে এলো। জানি না কোথা থেকে আমার চোখেও একবিন্দু জল এসে হাজির হলো । তাড়াতাড়ি সেটা মুছে ফেললাম যাতে অন্যান্য যাত্রীরা দেখতে না পায় । বাড়ি এসে মুখ হাত ধুয়ে একটু পুরনো স্মৃতি গুলো মনে পড়তে লাগলো। ফুলতলায় যেই আবেগ টা চেপে রেখেছিলাম সেটা বাড়ি এসে আর পারলাম না । সব একে একে মনে পড়তে লাগল । বিছানায় হেলান দিয়ে বসতেই আমার মেয়ে এসে বললো মা কি হয়েছে? আমি বললাম কিছু না যাও খেলো। মেয়ের বয়স 6 বছর । হ্যাঁ ঠিক এই বয়সেই সবাই পড়তে আসতো আমার কাছে । 10 বছর আগের কথা, কতোই না সুন্দর ছিল দিন গুলো সুখ দুঃখ, হাসি কান্না, সব মিলিয়ে ভালোই কাটতো। মাঝে মাঝে বন্ধু বান্ধবী দের সাথে ফোনে কথা আর আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের কথা না হয় বাকিই থাক। আমার জীবনের গল্প যতদিন বেঁচে থাকবে তার গল্প ও ততোদিন চলতে থাকবে । স্কুলে ফেলে আসা স্মৃতি , আহিরন হল্ট, আজিমগঞ্জ জংশন, নিমতলা ফেরিঘাট, শ্রীপত সিং কলেজ, উফ্ফ কি দিন ছিলো সেই সব। সংসারের বেড়াজালে আটকে ফুরসত ই পায় না দিন গুলো মনে করার। আজ আফসানা সব মনে করিয়ে দিলো। সত্যি স্মৃতি খুব কাঁদায়। চোখের জল ধরে রাখতে পারছি না । তখন 2020 সাল ছিল, সেই বছরই পরিস্থিতির কারণে আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের সঙ্গে কথা কমে যেতে থাকে । কিন্তু মনের মধ্যে ভালোবাসা টা এখনো একইরকম আছে । আজ আবার অনেক দিন পর ফিরে দেখা যাক সেই দিন গুলো । একে একে সবাই কে ফোন করে দেখি সবাই কেমন আছে। আমি জানি কেউ ফোন ধরুক বা না ধরুক আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ধরবেই ...........
No comments:
Post a Comment