Thursday, February 24, 2022

Ballal Dhipi : Kingdom of Ballal Sen || বল্লাল সেনের ইতিহাস | Ballal Dhipi : West Bengal

 বল্লাল ঢিপি নদিয়ার অন্যতম প্রত্নস্থল। নবদ্বীপের নিকটবর্তী মায়াপুরে কাছে বামুনপুকুরে ভক্ত চাঁদকাজীর সমাধিস্থল থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে বল্লাল ঢিপির অবস্থান। এই ঢিপির নিচে বল্লাল সেনের আমলে নির্মিত প্রাসাদ ছিল বলে অনুমান করা হয়। তবে বর্তমানে এটি পুরাকীর্তি সংরক্ষণ আইন অনুসারে এই অঞ্চল সংরক্ষিত করা হয়েছে। বল্লাল ঢিপি প্রায় চারশো ফুট প্রশস্থ ও উচ্চতায় পঁচিশ থেকে ত্রিশ ফুট।ঢিপিটি সবুজ ঘাসে মোড়া, আর চারিদিক কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা রয়েছে। সেন বংশের রাজা বল্লাল সেনের নামানুসারে এই ঢিপিটির নামকরণ করা হয়েছিল। ইতিহাসবিদগণ মনে করেন ধ্বংসস্তুপটি তৎকালীন সমাজের ধ্বংস হয়ে যাওয়া শহর বিজয়নগরের একটি অংশ।বিজয় নগর বা বিজাপুর ছিল সেই সময়ের একটি অত্যাধুনিক শহর ও সেন বংশের রাজধানী। বিজাপুর স্থাপন করেন বল্লাল সেনের পিতা রাজা বিজয় সেন।



সেন রাজাদের রাজা বল্লাল সেনের নামাঙ্কিত এই বৃহদাকার ঢিপিতে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ ১৯৮২-৮৩ থেকে ১৯৮৮-৮৯ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে উৎখনন পরিচালনা করে। উৎখননের দ্বারা এখানে আবিষ্কৃত হয়েছে বিস্তৃত প্রাঙ্গনের মধ্যে অবস্থিত বৃহদায়তন ইটের ইমারত যার চারিদিকে ছিল উচ্চ প্রাচীর। উৎখননে প্রাপ্ত প্রত্নবস্তুগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল পঙ্খের মূর্তি, পোড়ামাটির মানুষ, জীবজন্তুর মূর্তি, তামা ও লোহার তৈরি নানান জিনিসপত্র, পেরেক ও নানান প্রত্নসামগ্রী। অষ্টম ও নবম শতকের ধংসপ্রাপ্ত পুরাতন স্থাপত্যকীর্তির উপর পুনঃনির্মিত এই সৌধের উপরিভাগ আনুমানিক দ্বাদশ শতকের। বিভিন্ন সময়ে মেরামত, পরিবর্তন ও সংযোজনের নিদর্শনবাহী এই স্থাপত্য দ্বাদশ শতকে একটি বিশাল দেবালয় রূপ পরিগ্রহন করে।



বল্লাল সেন বাংলার সেন রাজবংশের দ্বিতীয় তথা শ্ৰেষ্ঠ নৃপতি ছিলেন। তিনি ১১৬০ থেকে ১১৭৯ সাল পর্যন্ত সেনবংশের রাজা ছিলেন। তিনি ছিলেন সেন রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা বিজয় সেনের পুত্র এবং তার যোগ্য উত্তরসূরী। রাজা বল্লাল সেন বাংলার সামাজিক সংস্কার, বিশেষ করে কৌলিন্য প্রথা প্রবর্তনকারী হিসাবে পরিচিত। তিনি সুপণ্ডিত ও লেখক ছিলেন। ‘দানসাগর’ ও ‘অদ্ভুদসাগর’ তার উল্লেখযোগ্য রচনা। বল্লাল সেন তার রাজত্বের সময় বহুদূর পর্যন্ত সাম্রাজ্য বিস্তার করেন। বরেন্দ্রভূমি, রাঢ়, বঙ্গ, এবং মিথিলা তার অধীনস্থ ছিল।


১০৬০ সালে রামপাল নগরে বল্লাল সেনের জন্ম হয়। তার পিতা বিজয়সেন গৌড়াধিপতি চন্দ্রসেনের কন্যাকে বিয়ে করেছিলেন। শৈব বরে তার জন্ম হওয়ায় বিজয়সেন পুত্রের নাম রাখেন "বরলাল", পরবর্তীতে "বল্লাল" শব্দটি তারই অপভ্রংশ হয়ে দাঁড়ায়। চৌদ্দ বছর বয়সেই তিনি অস্ত্রবিদ্যায় ও শাস্ত্রবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে উঠেন।


১১৬৮ সালে তিনি দানসাগর রচনা করেন এবং ১১৬৯ সালে অদ্ভুতসাগর রচনা শুরু করলেও পরবর্তীকালে তা সমাপ্ত করতে পারেন নি। পিতার মতো তিনিও শিবের উপাসক ছিলেন। অন্যান্য রাজকীয় উপাধির সঙ্গে তিনি "অরিরাজ নিঃশঙ্ক শঙ্কর" উপাধি গ্রহণ করেছিলেন। তিনি দক্ষিণ ভারতের পশ্চিম চালুক্য সাম্রাজ্যের রাজকন্যা রমাদেবীকে বিয়ে করেন। অদ্ভুতসাগর গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, বৃদ্ধ বয়সে বল্লাল সেন রাজ্যভার নিজ পুত্র লক্ষ্মণসেনকে অর্পণ করেন। বল্লাল সেন জীবনের শেষ দিনগুলি রামদেবীকে নিয়ে ত্রিবেণীর কাছে গঙ্গাতীরবর্তী একটি স্থানে অতিবাহিত করেন।


12 Sept 2021 এ আমি এই  স্থান টি পরিদর্শন করি।

যারা ঘুরতে ভালো বাসেন , যারা ঐতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্র ঘুরতে ভালো বাসেন তারা মায়াপুর মন্দির গেলে এই জায়গায় একবার অবশ্যই যাওয়ার চেষ্টা করবেন। মায়াপুরের খুব কাছেই অবস্থিত এটি।

Monday, February 21, 2022

Karnasuvarna , কর্ণসুবর্ণ, karnasuvarna and Shashanka, কর্ণসুবর্ণ ও শশাঙ্কের ইতিহাস

 পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার চিরুটি (বর্তমান নাম কর্ণসুবর্ণ) রেলসেটশনের কাছে রাজবাড়িডাঙায় প্রাচীন রক্তমৃত্তিকা(রাঙামাটি) বৌদ্ধবিহারের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। কর্ণসুবর্ণ বাংলার গৌড় রাজ্যের প্রথম স্বাধীন শাসক শশাঙ্ক-এর রাজধানী। চিনা বৌদ্ধ পর্যটক সুয়ান জাং -এর বিবরণীতে এর উল্লেখ আছে। চিনা ভাষায় এই বৌদ্ধবিহারের নাম লো-টো-মো-চিহ্ ।সুয়ান জাং তাম্রলিপ্ত থেকে এখানে এসেছিলেন। কর্ণসুবর্ণ স্থানীয় ভাবে রাজা কর্ণের প্রাসাদ নামে পরিচিত। 

হর্ষবর্ধনের সভাকবি বাণভট্টের রচনা হর্ষচরিত-এ ও চৈনিক তীর্থযাত্রী হিউয়েন সাং -এর ভ্রমণ বৃত্তান্ত তেও শশাঙ্ক ও কর্ণসুবর্ণের উল্লেখ পাওয়া যায়। 

শশাঙ্ক ছিলেন এক গুপ্ত সম্রাটের মহাসামন্ত । আনুমানিক ৬০৬-৬০৭ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ তিনি গৌড়ের শাসক হন। ৬৩৭-৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত শশাঙ্ক গৌড়ের স্বাধীন শাসক ছিলেন। উত্তর ভারতের ক্ষমতাধর রাজ্যগুলির সঙ্গে লড়াই করে শশাঙ্ক গৌড়ের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে  পেরেছিলেন। এই ঘটনা তাঁর বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয়। শশাঙ্কের রাজনৈতিক জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা স্থানীশ্বরের পুষ্যভূতি বংশীয় শাসক হর্ষবর্ধনের  সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব। সকলোত্তরপথনাথ উপাধিকারী হর্ষবর্ধন শশাঙ্ককে হারাতে পারেননি।

সুয়ান জাং লিখেছেন যে এই দেশটি জনবহুল এবং এখানকার মানুষেরা অত্যন্ত সমৃদ্ধ ছিল। এখানে জমি নীচু ও আর্দ্র, নিয়মিত কৃষিকাজ হতো, ফুল-ফল পাওয়া যেত, জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ এবং এখানকার মানুষজনের চরিত্র ভালো ও তাঁরা শিক্ষাদীক্ষার পৃষ্ঠপোষক। কর্ণসুবর্ণে বৌদ্ধ এবং শৈব (শিবের উপাসক) উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই বসবাস করত। 

বলা বাহুল্য বাণভট্টের রচনা হর্ষচরিত-এ শশাঙ্ককে 'বৌদ্ধবিদ্বেষী' বলে নিন্দা করা হয়েছে । অন্যদিকে শশাঙ্কের শাসনকালের কয়েক বছর পরে সুয়ান জাং কর্ণসুবর্ণ নগরের উপকণ্ঠে রক্তমৃত্তিকা বৌদ্ধবিহারের সমৃদ্ধি লক্ষ করেছিলেন। শশাঙ্কের মৃত্যুর পঞ্চাশ বছর পর চিনা পর্যটক ই-ৎসিঙ্ -এরও নজরে পড়েছিল বাংলায় বৌদ্ধ ধর্মের উন্নতি। শশাঙ্ক নির্বিচারে বৌদ্ধবিদ্বেষী হলে তা হতো না। বলা যায় যে শশাঙ্কের প্রতি সব লেখকেরা পুরোপুরি বিদ্বেষমুক্ত ছিলেন না।  সুতরাং শশাঙ্ক সম্পর্কে তাদের মতামত কিছুটা অতিরঞ্জিত ছিল বলে মনে করা যেতে পারে। 

কর্ণসুবর্ণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র ও প্রসাসনিক কেন্দ্র ছিল। শশাঙ্কের আমলের অনেক আগে থেকেই সম্ভবত এই অঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল। রক্তমৃত্তিকা (রাঙামাটি) থেকে জনৈক বণিক জাহাজ নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মালয় অঞ্চলে বাণিজ্য করতে গিয়েছিল এমন নিদর্শনও পাওয়া গেছে। এর থেকে কর্ণসুবর্ণের বাণিজ্যিক সমৃদ্ধির ইঙ্গিত পাওয়া যায়। 

শশাঙ্ক কোনো স্থায়ী রাজবংশ তৈরী করে যেতে পারেননি। ফলে তার মৃত্যুর পর গৌড়ের ক্ষমতা নষ্ট হয়। তাঁর মৃত্যুর পর এই শহর অল্প সময়ের জন্য কামরূপের রাজা ভাস্করবর্মার হাতে চলে যায় এর পর কিছুকাল এটি জয়নগরের রাজধানী ছিল। তবে সপ্তম শতকের পরে এই শহরের কথা আর বিশেষ জানা যায় না।  পাল এবং সেন যুগের ইতিহাসের উপাদানগুলিতে এর কোনো উল্লেখ নেই।


ধারণা করা হয়— মুর্শিদাবাদ জেলার সদর শহর বহরমপুর থেকে ৯.৬ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ভাগীরথী নদীর তীরে এই নগরীটি ছিল। বর্তমানে স্থানটি রাঙামাটি গ্রাম হিসেবে পরিচিত। ১৯৬২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ রাঙামাটির রাজবাড়ি ডাঙ্গার উঁচু ঢিবি খনন কার্য চালিয়ে কিছু নিদর্শন পায়। এগুলোর ভিতরে ছিল-  দুটি ব্রোঞ্জ নির্মিত বৌদ্ধ মূর্তি। একটিতে বুদ্ধদেব পদ্মের উপর দাঁডিয়ে, অন্যটিতে ভূমি স্পর্শ মুদ্রায় বসে আছেন। স্থাপত্য নিদর্শন হিসেবে পাওয়া যায়, পঞ্চায়তন ইঁট এবং পাথরের গাঁথা ভিত্তি। এছাড়া কিছু পোড়ামটির সিলমোহর পাওয়া যায়। এসকল সিলমোহরে রয়েছে বৌদ্ধ ধর্মচক্রের ছাপ, জোড়া হরিণ, গাছ ও পাখির চিত্র।

খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর দিকে রচিত বরাহমিহিরের বৃহৎসংহিতায় বঙ্গদেশের যে সব রাজ্যের নাম পাওয়া যায়, তা হলো- পৌণ্ড্র, সমতট, বর্ধমান, সুহ্ম, তাম্রলিপ্ত, বঙ্গ ও উপবঙ্গ। এই তালিকায় কর্ণসুবর্ণের নাম পাওয়া যায় না। হয়তো কর্ণসুর্বণ তখন প্রতিষ্ঠা পেলেই ততটা উল্লেখযোগ্য ছিল না। খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে  চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন-সাং-এর ভ্রমণ বৃত্তান্ত থেকে জানা যায়- তাঁর সময়ে বঙ্গের ভাগগুলো ছিল- পুণ্ড্রবর্ধন, কর্ণসুবর্ণ, সমতট ও তাম্রলিপ্ত।

খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন-সাং-এর ভ্রমণ বৃত্তান্ত থেকে জানা যায়- তাম্রলিপ্ত থেকে যাত্রা করে ৭০০ লি (প্রায় ১০০ মাইল) দূরে অবস্থিত 'কিয়েলোনাসুফালানো' জনপদে উপস্থিত হয়েছিলেন।  ধারণা করা হয়, এই জনপদের কেন্দ্র ছিল কর্ণসুবর্ণ। অনেকে মনে করেন মুর্শিদাবাদের ৯ মাইল দূরে 'করুসোন-কা-গড়' হলো কর্ণসুবর্ণের ধ্বংসাবশেষ।

প্রত্নতত্ত্ববিদ ফার্গুসনের ধারণা বর্ধমানের উত্তরাংশ, সমগ্র বীরভূম জেলা, মুর্শিদাবাদ, কৃষ্ণনগর এবং প্রাচীন যশোহর জুড়ে ছিল কর্ণসুবর্ণের শাসনের অন্তর্গত ছিল। হিউয়েন-সাং-এর মতে কর্ণসুবর্ণের পরিধি ছিল ৭০০ লি (১০০ মাইল) আর রাজধানীর পরিধি ছিল ২০ লি। হিউয়েন-সাং-এর ভ্রমণকালে এই স্থান জনাকীর্ণ ছিল। বহুজাতের মানুষ এখানে বাস করতো। এখানকার ভূমি উর্বর ছিল। স্থানীয় মানুষ ছিল সরল এবং ধার্মিক। কর্ণসুবর্ণে ১০-১১টি বৌদ্ধ সঙ্ঘারাম ছিল। এসকল সঙ্ঘারামে প্রায় দুই হাজার বৌদ্ধ ভিক্ষু ছিলেন। এছাড়া ছিল প্রায় পঞ্চাশটি হিন্দু দেবদেবীর মন্দির ছিল।


Karnasuvarna, Murshidabad, karnasuvarna: first capital of independed Bengal, Karnasuvarna: Capital of shashanka, karnasuvarna guptodhon,

Karnasuvarna guptodhon movie released, 

A historical place Karnasuvarna, 

Best tourist places for history lovers in Murshidabad, 

Karnasuvarna tour 2022,

Saturday, February 19, 2022

TARAPITH , তারাপীঠ , Tarapith tour in 2022, Tarapith temple, Tara Maa, এই স্থানের উৎপত্তি এবং গুরুত্ব

 

তারাপীঠ হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলার রামপুরহাট মহকুমার চণ্ডীপুর গ্রামের রামপুরহাট  ব্লকের একটি হিন্দু মন্দির, যা তার তান্ত্রিক মন্দির এবং এর পার্শ্ববর্তী শ্মশান (মহাশ্মশান) মাঠের জন্যও পরিচিত যেখানে সাধনা (তান্ত্রিক আচার) করা হয় তান্ত্রিক হিন্দু মন্দিরটি দেবী তারামাকে উৎসর্গ করা হয়েছে তারাপীঠ - তারা উপাসনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসাবে এর নামটি পেয়েছে

তারাপীঠ সাধক বামাখেপার জন্য বিখ্যাত, যিনি অবধূত বা "পাগল সাধু" নামে পরিচিত, যিনি মন্দিরে উপাসনা করতেন এবং শ্মশান ঘাটে একজন চিকিত্সক হিসাবে বসবাস করতেন এবং অন্য একজন বিখ্যাত সাধু কৈলাশপতির অধীনে যোগ তান্ত্রিক কলা অনুশীলন করেছিলেন বাবা বামাখেপা তার পুরো জীবন তারা মায়ের পূজায় উৎসর্গ করেছিলেন তার আশ্রম দ্বারকা নদীর তীরে এবং তারা মন্দিরের কাছে অবস্থিত

তারাপীঠ হল পশ্চিমবঙ্গের দ্বারকা নদীর তীরে অবস্থিত তারাপীঠ থানার সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি গ্রাম এটি বন্যার সমভূমিতে সবুজ ধানক্ষেতের মাঝে অবস্থিত এটি দেখতে একটি সাধারণ বাঙালি গ্রামের মতো শহরটি বীরভূম জেলার রামপুরহাট মহকুমা থেকে 6 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত "রামপুরহাট" এবং 'তারাপীঠ রোড' হল নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন

এই স্থানের উৎপত্তি এবং গুরুত্ব সম্পর্কে বেশ কিছু কিংবদন্তি বর্ণিত আছে, সবই তারাপীঠ মন্দিরে দেবী তারার সাথে সম্পর্কিত একটি সুপরিচিত কিংবদন্তি শক্তিপীঠের সাথে সম্পর্কিত সতী, শিবের সহধর্মিণী, অপমানিত বোধ করেছিলেন যখন তার পিতা দক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে শিবকে তার আয়োজিত মহান যজ্ঞ তে আমন্ত্রণ জানাননি তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে শিবের প্রত্যাখ্যান সত্ত্বেও, যখন সতী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন, তখন দক্ষ সমস্ত পরিচারকদের সামনে শিবকে অপমান করেন এই অপমান সইতে না পেরে সতী যজ্ঞের আগুনে ঝাঁপ দিয়ে জীবন ত্যাগ করেন ঘটনার এই করুণ পালা দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে শিব বন্য হয়ে গেলেন তারপর, বিষ্ণু, শিবকে শান্ত করার জন্য, তার চক্র দ্বারা সতীর দেহকে ধ্বংস করেছিলেন সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে সতীর দেহের অংশ পড়েছিল দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পতিত স্থানগুলি বিভিন্ন প্রকাশে দেবীর পূজাকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে এমন 51টি পবিত্র মন্দির রয়েছে যেগুলিকে সতীপীঠ বলা হয়

সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে 51টি সতীপীঠ রয়েছে যা সংস্কৃতের 51টি অক্ষরের সাথে যুক্তএই মন্দিরগুলি তন্ত্র অনুশীলনকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাসনার স্থান

মন্দিরের ভিত্তি মোটা মোটা দেয়াল, লাল ইটের তৈরি উপরের কাঠামোটি একটি চূড়া (শিকারা) দিয়ে চূড়া পর্যন্ত উত্থিত অনেক খিলান সহ আচ্ছাদিত করেছে দেবতার মূর্তি গর্ভগৃহে স্থাপিত গর্ভগৃহে দুটি তারার মূর্তি রয়েছে তারার পাথরের মূর্তিটি শিবকে দুধ খাওয়ানো মা হিসাবে দেখানো হয়েছে - "আদি মূর্তি" (তারার প্রতিমূর্তিটির উগ্র রূপ p¡j­e  দেখা যায়) একটি তিন ফুট ধাতব মূর্তি দ্বারা ছদ্মবেশিত, যা ভক্তরা সাধারণত দেখেন এটি তারাকে চারটি বাহু সহ তার জ্বলন্ত আকারে উপস্থাপন করে, একটি মাথার খুলির মালা পরা এবং একটি প্রসারিত জিহ্বা একটি রূপালী মুকুট এবং প্রবাহিত চুলের সাথে মুকুট, বাইরের ছবিটি একটি শাড়িতে মোড়ানো এবং Sh¡ ফুলের মালা দিয়ে তার মাথায় একটি রূপার ছাতা দিয়ে সজ্জিত ধাতব মূর্তির কপাল লাল কুমকুম (সিঁদুর) দ্বারা শোভিত পুরোহিতরা এই কুমকুমের একটি ছিদ্র নিয়ে তারামার আশীর্বাদের চিহ্ন হিসাবে ভক্তদের কপালে লাগান ভক্তরা নারকেল, কলা এবং সিল্কের শাড়ি প্রদান করে তারামার আদিম চিত্রটিকে "তারার মৃদু দৃষ্টিভঙ্গির নাটকীয় হিন্দু চিত্র" হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে

মন্দিরের পুরোহিতরা ভক্তদের কাছে তার মাতৃত্বের দিকটি প্রকাশ করার জন্য অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে পূজা (উপাসনা) করেনতাদের উপাসনা তারার শান্তিপূর্ণ মাতৃদর্শী রূপের সাথে দেবীর সতী পুরাণের উগ্র উত্তর ভারতীয় চিত্রকে মিশ্রিত করেতারাপীঠে, যদিও উগ্র দেবীর নরম মাতৃত্বের দিকে জোর দেওয়া হয়েছেতার প্রশংসায় স্তোত্র বা কবিতার জপও দেবীর প্রতি করা ভক্তিমূলক আবেদনের একটি অংশ

ভক্তরা পূজা দেওয়ার জন্য মন্দির প্রাঙ্গণে প্রবেশের আগে এমনকি পূজার পরেও মন্দির সংলগ্ন পবিত্র জলাশয়ে পবিত্র স্নান করেন

 

ছাগলের ​​বলিদান মন্দিরে প্রতিদিনের নিয়মএই ধরনের ছাগল বলিদানকারী ভক্তরা দেবতার আশীর্বাদ চানতারা বলির আগে মন্দিরের কাছে পবিত্র জলাশয়ে ছাগলগুলিকে স্নান করেতারা দেবতার পূজা করার আগে পবিত্র জলাশয়ে স্নান করে নিজেদের শুদ্ধ করেতারপর ছাগলটিকে একটি দণ্ডের সাথে বেঁধে দেওয়া হয় একটি বালির গর্তে , এবং একটি বিশেষ তরবারি দ্বারা একক আঘাতে ছাগলের বলি হয়ছাগলের অল্প পরিমাণ রক্ত ​​একটি পাত্রে সংগ্রহ করে মন্দিরে দেবতাকে নিবেদন করা হয়ভক্তরাও দেবতার প্রতি শ্রদ্ধার চিহ্ন হিসাবে গর্ত থেকে কিছুটা রক্ত ​​দিয়ে তাদের কপালে দাগ দেয়

 

শ্মশান (মহাস্মাসন), অন্ধকার জঙ্গলের পরিবেশের মধ্যে, গ্রামীণ জীবন এবং বাঙালি সমাজ ব্যবস্থার অনুশীলন থেকে দূরে শহরের সীমানার শেষ প্রান্তে নদীর তীরে অবস্থিত বাংলায়, তারাপীঠের শ্মশানকেও শক্তিপীঠের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে বিবেচনা করা হয় এটা বিশ্বাস করা হয় যে দেবী তারাকে ছায়ার মধ্যে দেখা যায় ছাগলের রক্ত ​​পান করতে যা তার বেদীতে প্রতিদিন বলি দেওয়া হয়, তার ক্রোধ মেটাতে এবং অনুগ্রহ খোঁজার জন্য

তান্ত্রিক অনুশীলনকারীরা বিশ্বাস করেন যে তারা হাড় এবং কঙ্কালের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং শ্মশান তার পছন্দের বাসস্থান দেবী তারার ছায়ার চিত্রগুলি শ্মশানের মধ্যে দেখায় তাই তান্ত্রিক অনুশীলনকারীরা তাদের তান্ত্রিক সাধনা (আধ্যাত্মিক সাধনা) করার জন্য প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই স্থলে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন; অনেক সাধু এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করে সাধুরা বটগাছের মাঝে তাদের কুঁড়েঘর তৈরি করেছে এবং মাটির দেয়ালের সাথে লাল রঙের খুলি দিয়ে তাদের কুঁড়েঘরগুলিকে অলঙ্কৃত করেছে এছাড়াও, হিন্দু দেবদেবী, এবং প্রবেশদ্বারে Sh¡ ফুলের মালা এবং খুলি দিয়ে সজ্জিত একটি ত্রিশূল (ত্রিশূল) কুঁড়েঘরের সামনে একটি সাধারণ দৃশ্য মানুষের পাশাপাশি পশুর মাথার খুলি যেমন শেয়াল এবং শকুন - যা তান্ত্রিক আচারের জন্য অনুপযুক্ত - এবং সাপের চামড়া কুঁড়েঘর সাজায় তান্ত্রিক আচার-অনুষ্ঠানের জন্য এবং তান্ত্রিকদের দ্বারা মদ্যপানের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত ভাল মাথার খুলি ব্যবহারের আগে নিরাময় করা হয়; কুমারী এবং যারা আত্মহত্যা করেছে তাদের মাথার খুলি শক্তিশালী বলে বলা হয়

 

তারাপীঠে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে গৃহীত একজন সাধু যার মন্দিরটি মাতারা মন্দিরের আশেপাশে অবস্থিত, তিনি ছিলেন বামাখেপা (1837-1911) যিনি "পাগল সাধু" নামে পরিচিত বামা-খেপা, আক্ষরিক অর্থে পাগল ("খেপা") "বাম হাতের" (সংস্কৃতে "বামা" বা "বামা") পথের অনুসারী - উপাসনার তান্ত্রিক উপায় বামাখেপা, দেবী তারার প্রবল ভক্ত মন্দিরের কাছে থাকতেন এবং শ্মশানে ধ্যান করতেন তিনি ছিলেন আরেক বিখ্যাত বাঙালি সাধক রামকৃষ্ণের সমসাময়িক অল্প বয়সে, তিনি তার বাড়ি ছেড়েছিলেন এবং তারাপীঠে বসবাসকারী কৈলাসপতি বাবা নামে এক সাধুর অধীনে আসেন তিনি যোগ এবং তান্ত্রিক সাধনা (উপাসনা) সিদ্ধ করেছিলেন, যার ফলে তিনি তারাপীঠের আধ্যাত্মিক প্রধান হয়েছিলেন তিনি মালুটি গ্রামের দেবী মৌলক্ষী মন্দিরেও পুজো দিতে যান লোকেরা তাদের অসুস্থতার জন্য আশীর্বাদ বা নিরাময়ের জন্য তাঁর কাছে এসেছিল, দুঃখে বা কেবল তাঁর সাথে দেখা করতে তিনি মন্দিরের নির্ধারিত নিয়মগুলি অনুসরণ করেননি এবং ফলস্বরূপ, দেবতার জন্য নৈবেদ্য হিসাবে খাবার গ্রহণ করার জন্য মন্দিরের পুরোহিতদের দ্বারা একবার আক্রমণ করা হয়েছিল কথিত আছে: তারামা নাটোরের মহারানী- রাণী অন্নদাসুন্দরী দেবীর স্বপ্নে আবির্ভূত হয়েছিলেন এবং তাকে বলেছিলেন যে বামা তার পুত্র হওয়ায় তাকে আগে খাওয়াতে এই ঘটনার পর, বামাখেপাকে প্রথমে দেবতার সামনে মন্দিরে খাওয়ানো হয়েছিল এবং কেউ তাকে বাধা দেয়নি এটা বিশ্বাস করা হয় যে তারামা তার বুকে নিয়ে যাওয়ার আগে শ্মশানে বামাখেপাকে তার একটি দর্শন দিয়েছিলেন


TARAPITH, TARAPITH TOUR 2022, BIRBHUM, WEST BENGAL, TARA MAA, MAA TARA, Bamakhepa, RAMPURHAT-TARAPITH, Sidhho PithTara , Tara maa, pujaTarapith

USE GOOGLE TRANSLATE