Monday, February 21, 2022

Karnasuvarna , কর্ণসুবর্ণ, karnasuvarna and Shashanka, কর্ণসুবর্ণ ও শশাঙ্কের ইতিহাস

 পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার চিরুটি (বর্তমান নাম কর্ণসুবর্ণ) রেলসেটশনের কাছে রাজবাড়িডাঙায় প্রাচীন রক্তমৃত্তিকা(রাঙামাটি) বৌদ্ধবিহারের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। কর্ণসুবর্ণ বাংলার গৌড় রাজ্যের প্রথম স্বাধীন শাসক শশাঙ্ক-এর রাজধানী। চিনা বৌদ্ধ পর্যটক সুয়ান জাং -এর বিবরণীতে এর উল্লেখ আছে। চিনা ভাষায় এই বৌদ্ধবিহারের নাম লো-টো-মো-চিহ্ ।সুয়ান জাং তাম্রলিপ্ত থেকে এখানে এসেছিলেন। কর্ণসুবর্ণ স্থানীয় ভাবে রাজা কর্ণের প্রাসাদ নামে পরিচিত। 

হর্ষবর্ধনের সভাকবি বাণভট্টের রচনা হর্ষচরিত-এ ও চৈনিক তীর্থযাত্রী হিউয়েন সাং -এর ভ্রমণ বৃত্তান্ত তেও শশাঙ্ক ও কর্ণসুবর্ণের উল্লেখ পাওয়া যায়। 

শশাঙ্ক ছিলেন এক গুপ্ত সম্রাটের মহাসামন্ত । আনুমানিক ৬০৬-৬০৭ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ তিনি গৌড়ের শাসক হন। ৬৩৭-৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত শশাঙ্ক গৌড়ের স্বাধীন শাসক ছিলেন। উত্তর ভারতের ক্ষমতাধর রাজ্যগুলির সঙ্গে লড়াই করে শশাঙ্ক গৌড়ের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে  পেরেছিলেন। এই ঘটনা তাঁর বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয়। শশাঙ্কের রাজনৈতিক জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা স্থানীশ্বরের পুষ্যভূতি বংশীয় শাসক হর্ষবর্ধনের  সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব। সকলোত্তরপথনাথ উপাধিকারী হর্ষবর্ধন শশাঙ্ককে হারাতে পারেননি।

সুয়ান জাং লিখেছেন যে এই দেশটি জনবহুল এবং এখানকার মানুষেরা অত্যন্ত সমৃদ্ধ ছিল। এখানে জমি নীচু ও আর্দ্র, নিয়মিত কৃষিকাজ হতো, ফুল-ফল পাওয়া যেত, জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ এবং এখানকার মানুষজনের চরিত্র ভালো ও তাঁরা শিক্ষাদীক্ষার পৃষ্ঠপোষক। কর্ণসুবর্ণে বৌদ্ধ এবং শৈব (শিবের উপাসক) উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই বসবাস করত। 

বলা বাহুল্য বাণভট্টের রচনা হর্ষচরিত-এ শশাঙ্ককে 'বৌদ্ধবিদ্বেষী' বলে নিন্দা করা হয়েছে । অন্যদিকে শশাঙ্কের শাসনকালের কয়েক বছর পরে সুয়ান জাং কর্ণসুবর্ণ নগরের উপকণ্ঠে রক্তমৃত্তিকা বৌদ্ধবিহারের সমৃদ্ধি লক্ষ করেছিলেন। শশাঙ্কের মৃত্যুর পঞ্চাশ বছর পর চিনা পর্যটক ই-ৎসিঙ্ -এরও নজরে পড়েছিল বাংলায় বৌদ্ধ ধর্মের উন্নতি। শশাঙ্ক নির্বিচারে বৌদ্ধবিদ্বেষী হলে তা হতো না। বলা যায় যে শশাঙ্কের প্রতি সব লেখকেরা পুরোপুরি বিদ্বেষমুক্ত ছিলেন না।  সুতরাং শশাঙ্ক সম্পর্কে তাদের মতামত কিছুটা অতিরঞ্জিত ছিল বলে মনে করা যেতে পারে। 

কর্ণসুবর্ণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র ও প্রসাসনিক কেন্দ্র ছিল। শশাঙ্কের আমলের অনেক আগে থেকেই সম্ভবত এই অঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল। রক্তমৃত্তিকা (রাঙামাটি) থেকে জনৈক বণিক জাহাজ নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মালয় অঞ্চলে বাণিজ্য করতে গিয়েছিল এমন নিদর্শনও পাওয়া গেছে। এর থেকে কর্ণসুবর্ণের বাণিজ্যিক সমৃদ্ধির ইঙ্গিত পাওয়া যায়। 

শশাঙ্ক কোনো স্থায়ী রাজবংশ তৈরী করে যেতে পারেননি। ফলে তার মৃত্যুর পর গৌড়ের ক্ষমতা নষ্ট হয়। তাঁর মৃত্যুর পর এই শহর অল্প সময়ের জন্য কামরূপের রাজা ভাস্করবর্মার হাতে চলে যায় এর পর কিছুকাল এটি জয়নগরের রাজধানী ছিল। তবে সপ্তম শতকের পরে এই শহরের কথা আর বিশেষ জানা যায় না।  পাল এবং সেন যুগের ইতিহাসের উপাদানগুলিতে এর কোনো উল্লেখ নেই।


ধারণা করা হয়— মুর্শিদাবাদ জেলার সদর শহর বহরমপুর থেকে ৯.৬ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ভাগীরথী নদীর তীরে এই নগরীটি ছিল। বর্তমানে স্থানটি রাঙামাটি গ্রাম হিসেবে পরিচিত। ১৯৬২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ রাঙামাটির রাজবাড়ি ডাঙ্গার উঁচু ঢিবি খনন কার্য চালিয়ে কিছু নিদর্শন পায়। এগুলোর ভিতরে ছিল-  দুটি ব্রোঞ্জ নির্মিত বৌদ্ধ মূর্তি। একটিতে বুদ্ধদেব পদ্মের উপর দাঁডিয়ে, অন্যটিতে ভূমি স্পর্শ মুদ্রায় বসে আছেন। স্থাপত্য নিদর্শন হিসেবে পাওয়া যায়, পঞ্চায়তন ইঁট এবং পাথরের গাঁথা ভিত্তি। এছাড়া কিছু পোড়ামটির সিলমোহর পাওয়া যায়। এসকল সিলমোহরে রয়েছে বৌদ্ধ ধর্মচক্রের ছাপ, জোড়া হরিণ, গাছ ও পাখির চিত্র।

খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর দিকে রচিত বরাহমিহিরের বৃহৎসংহিতায় বঙ্গদেশের যে সব রাজ্যের নাম পাওয়া যায়, তা হলো- পৌণ্ড্র, সমতট, বর্ধমান, সুহ্ম, তাম্রলিপ্ত, বঙ্গ ও উপবঙ্গ। এই তালিকায় কর্ণসুবর্ণের নাম পাওয়া যায় না। হয়তো কর্ণসুর্বণ তখন প্রতিষ্ঠা পেলেই ততটা উল্লেখযোগ্য ছিল না। খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে  চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন-সাং-এর ভ্রমণ বৃত্তান্ত থেকে জানা যায়- তাঁর সময়ে বঙ্গের ভাগগুলো ছিল- পুণ্ড্রবর্ধন, কর্ণসুবর্ণ, সমতট ও তাম্রলিপ্ত।

খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন-সাং-এর ভ্রমণ বৃত্তান্ত থেকে জানা যায়- তাম্রলিপ্ত থেকে যাত্রা করে ৭০০ লি (প্রায় ১০০ মাইল) দূরে অবস্থিত 'কিয়েলোনাসুফালানো' জনপদে উপস্থিত হয়েছিলেন।  ধারণা করা হয়, এই জনপদের কেন্দ্র ছিল কর্ণসুবর্ণ। অনেকে মনে করেন মুর্শিদাবাদের ৯ মাইল দূরে 'করুসোন-কা-গড়' হলো কর্ণসুবর্ণের ধ্বংসাবশেষ।

প্রত্নতত্ত্ববিদ ফার্গুসনের ধারণা বর্ধমানের উত্তরাংশ, সমগ্র বীরভূম জেলা, মুর্শিদাবাদ, কৃষ্ণনগর এবং প্রাচীন যশোহর জুড়ে ছিল কর্ণসুবর্ণের শাসনের অন্তর্গত ছিল। হিউয়েন-সাং-এর মতে কর্ণসুবর্ণের পরিধি ছিল ৭০০ লি (১০০ মাইল) আর রাজধানীর পরিধি ছিল ২০ লি। হিউয়েন-সাং-এর ভ্রমণকালে এই স্থান জনাকীর্ণ ছিল। বহুজাতের মানুষ এখানে বাস করতো। এখানকার ভূমি উর্বর ছিল। স্থানীয় মানুষ ছিল সরল এবং ধার্মিক। কর্ণসুবর্ণে ১০-১১টি বৌদ্ধ সঙ্ঘারাম ছিল। এসকল সঙ্ঘারামে প্রায় দুই হাজার বৌদ্ধ ভিক্ষু ছিলেন। এছাড়া ছিল প্রায় পঞ্চাশটি হিন্দু দেবদেবীর মন্দির ছিল।


Karnasuvarna, Murshidabad, karnasuvarna: first capital of independed Bengal, Karnasuvarna: Capital of shashanka, karnasuvarna guptodhon,

Karnasuvarna guptodhon movie released, 

A historical place Karnasuvarna, 

Best tourist places for history lovers in Murshidabad, 

Karnasuvarna tour 2022,

2 comments: