Thursday, February 24, 2022

Ballal Dhipi : Kingdom of Ballal Sen || বল্লাল সেনের ইতিহাস | Ballal Dhipi : West Bengal

 বল্লাল ঢিপি নদিয়ার অন্যতম প্রত্নস্থল। নবদ্বীপের নিকটবর্তী মায়াপুরে কাছে বামুনপুকুরে ভক্ত চাঁদকাজীর সমাধিস্থল থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে বল্লাল ঢিপির অবস্থান। এই ঢিপির নিচে বল্লাল সেনের আমলে নির্মিত প্রাসাদ ছিল বলে অনুমান করা হয়। তবে বর্তমানে এটি পুরাকীর্তি সংরক্ষণ আইন অনুসারে এই অঞ্চল সংরক্ষিত করা হয়েছে। বল্লাল ঢিপি প্রায় চারশো ফুট প্রশস্থ ও উচ্চতায় পঁচিশ থেকে ত্রিশ ফুট।ঢিপিটি সবুজ ঘাসে মোড়া, আর চারিদিক কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা রয়েছে। সেন বংশের রাজা বল্লাল সেনের নামানুসারে এই ঢিপিটির নামকরণ করা হয়েছিল। ইতিহাসবিদগণ মনে করেন ধ্বংসস্তুপটি তৎকালীন সমাজের ধ্বংস হয়ে যাওয়া শহর বিজয়নগরের একটি অংশ।বিজয় নগর বা বিজাপুর ছিল সেই সময়ের একটি অত্যাধুনিক শহর ও সেন বংশের রাজধানী। বিজাপুর স্থাপন করেন বল্লাল সেনের পিতা রাজা বিজয় সেন।



সেন রাজাদের রাজা বল্লাল সেনের নামাঙ্কিত এই বৃহদাকার ঢিপিতে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ ১৯৮২-৮৩ থেকে ১৯৮৮-৮৯ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে উৎখনন পরিচালনা করে। উৎখননের দ্বারা এখানে আবিষ্কৃত হয়েছে বিস্তৃত প্রাঙ্গনের মধ্যে অবস্থিত বৃহদায়তন ইটের ইমারত যার চারিদিকে ছিল উচ্চ প্রাচীর। উৎখননে প্রাপ্ত প্রত্নবস্তুগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল পঙ্খের মূর্তি, পোড়ামাটির মানুষ, জীবজন্তুর মূর্তি, তামা ও লোহার তৈরি নানান জিনিসপত্র, পেরেক ও নানান প্রত্নসামগ্রী। অষ্টম ও নবম শতকের ধংসপ্রাপ্ত পুরাতন স্থাপত্যকীর্তির উপর পুনঃনির্মিত এই সৌধের উপরিভাগ আনুমানিক দ্বাদশ শতকের। বিভিন্ন সময়ে মেরামত, পরিবর্তন ও সংযোজনের নিদর্শনবাহী এই স্থাপত্য দ্বাদশ শতকে একটি বিশাল দেবালয় রূপ পরিগ্রহন করে।



বল্লাল সেন বাংলার সেন রাজবংশের দ্বিতীয় তথা শ্ৰেষ্ঠ নৃপতি ছিলেন। তিনি ১১৬০ থেকে ১১৭৯ সাল পর্যন্ত সেনবংশের রাজা ছিলেন। তিনি ছিলেন সেন রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা বিজয় সেনের পুত্র এবং তার যোগ্য উত্তরসূরী। রাজা বল্লাল সেন বাংলার সামাজিক সংস্কার, বিশেষ করে কৌলিন্য প্রথা প্রবর্তনকারী হিসাবে পরিচিত। তিনি সুপণ্ডিত ও লেখক ছিলেন। ‘দানসাগর’ ও ‘অদ্ভুদসাগর’ তার উল্লেখযোগ্য রচনা। বল্লাল সেন তার রাজত্বের সময় বহুদূর পর্যন্ত সাম্রাজ্য বিস্তার করেন। বরেন্দ্রভূমি, রাঢ়, বঙ্গ, এবং মিথিলা তার অধীনস্থ ছিল।


১০৬০ সালে রামপাল নগরে বল্লাল সেনের জন্ম হয়। তার পিতা বিজয়সেন গৌড়াধিপতি চন্দ্রসেনের কন্যাকে বিয়ে করেছিলেন। শৈব বরে তার জন্ম হওয়ায় বিজয়সেন পুত্রের নাম রাখেন "বরলাল", পরবর্তীতে "বল্লাল" শব্দটি তারই অপভ্রংশ হয়ে দাঁড়ায়। চৌদ্দ বছর বয়সেই তিনি অস্ত্রবিদ্যায় ও শাস্ত্রবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে উঠেন।


১১৬৮ সালে তিনি দানসাগর রচনা করেন এবং ১১৬৯ সালে অদ্ভুতসাগর রচনা শুরু করলেও পরবর্তীকালে তা সমাপ্ত করতে পারেন নি। পিতার মতো তিনিও শিবের উপাসক ছিলেন। অন্যান্য রাজকীয় উপাধির সঙ্গে তিনি "অরিরাজ নিঃশঙ্ক শঙ্কর" উপাধি গ্রহণ করেছিলেন। তিনি দক্ষিণ ভারতের পশ্চিম চালুক্য সাম্রাজ্যের রাজকন্যা রমাদেবীকে বিয়ে করেন। অদ্ভুতসাগর গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, বৃদ্ধ বয়সে বল্লাল সেন রাজ্যভার নিজ পুত্র লক্ষ্মণসেনকে অর্পণ করেন। বল্লাল সেন জীবনের শেষ দিনগুলি রামদেবীকে নিয়ে ত্রিবেণীর কাছে গঙ্গাতীরবর্তী একটি স্থানে অতিবাহিত করেন।


12 Sept 2021 এ আমি এই  স্থান টি পরিদর্শন করি।

যারা ঘুরতে ভালো বাসেন , যারা ঐতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্র ঘুরতে ভালো বাসেন তারা মায়াপুর মন্দির গেলে এই জায়গায় একবার অবশ্যই যাওয়ার চেষ্টা করবেন। মায়াপুরের খুব কাছেই অবস্থিত এটি।

No comments:

Post a Comment