নির্মলা
বিমান চন্দ্র দাস
(তৃতীয় পর্ব)
পরদিন কলেজে গিয়েই মৃণাল প্রথমেই রিমিকে চুপিসারে জিজ্ঞাসা করলো - কাল রাতে আমরা সবাই ফোন রেখে দেওয়ার পর তুই নির্মলা কে ফোন করেছিলি তখন কি বলেছিলিস? রিমি উত্তর দিল, আমি বললাম মাসি ফোন করেছিলো মা আমার ফোন থেকে কথা বলছিলো তাই ব্যস্ত পেয়েছিলিস। মৃণাল সঙ্গে সঙ্গে বাহ্বা দিয়ে বললো ভালো বলেছিস। মৃণালের এই কথাটা শেষ হতে না হতেই রিমি হঠাৎ এক অদ্ভুত ধরনের ভঙ্গিমায় বললো sorry রে, আমি তোদের কোনো দিন মিথ্যা বলি না কিন্তু বলতে হলো। মৃনাল তাকে শান্তনা দিয়ে বললো sorry তো আমাকে বলা উচিত, আমার জন্য তোকে মিথ্যা বলতে হলো। রিমি আবার একটা কি বলতে গিয়ে নিজেকে থামিয়ে নিয়ে বললো বাদ দে ওসব, চল ক্লাসের সময় হয়ে গেছে।
ক্লাসে বসেই সুমন্ত মৃণালের মুখে আর মৃনাল নির্মলার মুখে এক অস্থির ভাব লক্ষ্য করলো। মৃণালের অস্থিরতার কারন তো সুমন্ত বুঝতে পারলো কিন্তু মৃণাল নির্মলার অস্থিরতার কারনটা বুঝতে পারলো না। ক্লাসের শেষে থাকতে না পেরে মৃণাল জিজ্ঞাসা করেই ফেললো, নির্মলা তোর কি কিছু হয়েছে? নির্মলা হঠাৎ অন্যমনস্কতা থেকে তড়িঘড়ি বেড়িয়ে আসার চেষ্টা করে স্বাভাবিক ভাবেই বললো কই নাতো , কি হবে? মৃণাল বললো তোর হাব ভাব কেমন লাগছে। অন্যান্য দিনের মতো স্বতস্ফূর্ত লাগছে না। নির্মলা কথাটা এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করে বললো ও কিছু না রে, কাল রাতে ফোনে কথা বলতে বলতে বাড়ির লোকের সঙ্গে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছে তাই আর কি। ছাড়তো ওসব, কথা কাল মতিঝিলে তুই কতগুলো ছবি তুলেছিলিস কই দ্যাখা দেখি। প্রত্যুত্তরে মৃনাল বললো হ্যাঁ দেখাচ্ছি , ততক্ষণ তোর গুলোও দেখি, তোর ফোনটা দে আমাকে । এই বলে তারা সবাই একে অপরের ফোন নিয়ে ছবি দেখতে থাকলো। তার মধ্যেই হঠাৎ করে সেবিনা বলে উঠলো কাকলি তোর দাদার বিয়ের তারিখ ঠিক হয়েছে? কাকলি উত্তরে বললো হ্যাঁ রে, কিছুদিনের মধ্যেই নেমন্তন্ন পেয়ে যাবি। পাশ থেকে মুচকি হেসে সুমন্তর মন্তব্য নেমন্তন্নের দরকার নেই এমনি চলে যাবো। এই কথা শুনে অনেক্ষন পর সবার মুখে হাসি দেখা গেলো।
রীতিমতো কিছুদিনের মধ্যেই সবার বাড়ি নিমন্ত্রণ পত্র পৌঁছে গেলো। কারো কোনো সমস্যা ছিল না তবে নির্মলা আর সেবিনাকে নিয়ে চিন্তিত ছিল সবাই। বাইরে রাত কাটাতে হবে শুনে হয়তো আসতেই দেবে না ওদের বাড়ি থেকে। কিন্তু কাকলিও সেই ব্যবস্থা আগে থেকেই করে রেখেছে। কাকলি নিজে নয় তার দাদাকে দিয়ে ওদের দুজনের বাড়িতে ফোন করিয়ে রাজি করালো। তাদের বাড়ি থেকে কোনো আপত্তি আসার আগেই সমস্ত ব্যবস্থাপনার কথা জানিয়ে দেয় কাকলির দাদা। তাদের জন্য একটি আলাদা বাড়িতে আলাদা ঘরে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে, কোনো অসুবিধা হবে না, এসব কাকুতি মিনুতি করার পর দুজনের পরিবারই রাজী হয়।
সময়মতো সবাই বিয়ের বৌভাতের দিন সকাল এগারোটায় কাকলির বাড়িতে হাজির। সবাইকে দেখে কাকলির মনে কি আনন্দ। তারা ছয়জন এক জায়গায় হতেই একটা হই-হট্টগোল বেঁধে গেল, চেঁচামেচি, নাচানাচি, হাঁসাহাঁসি পুরো বাড়ি মাথায় করে তুললো তারা। সবার নজর তাদের দিকেই, সবার মনে জিজ্ঞাসার ভাব ছেলেমেয়ে গুলো কে? কাকলির মা তো বলেই দিলো এতক্ষণে বাড়িতে বিয়ে বিয়ে মানাচ্ছে। কাকলির দাদা সুমন্তকে আগে থেকেই চিনতো ; একটি ঘরের দিকে ইশারা করে বললো আয় ভাই তোরা সবাই এঘরে এসে বোস। কাকলি বললো চল সবাই হাত-মুখ ধুয়ে নে তার পর জমিয়ে মজা হবে। পাশে থেকে কাকলির বাবার মন্তব্য এতো দূর থেকে সবাই এলো আগে কিছু খেতে দে তার পর মজা। সেবিনা বললো আসতে আসতেই আমাদের এতো খাতির ভাবায় যায় না! কাকলির হাসতে হাসতে জবাব এলো তোরা কার বন্ধু দেখতে হবে তো। নির্মলা বললো হ্যাঁ জানি এবাড়ির মহারানীর। রিমি হালকা হেসে নির্মলার কথাটায় আরো একটা বিশেষণ যোগ করে দিলো, শুধু মহারানী নয় রে আদুরে মহারানী। এর পর সবাই হাত-মুখ ধুয়ে এসে ঘরে বসতেই সবার জন্য প্লেটে মিষ্টি, দই, পাঁপড় ভাজা আর গ্লাসে সরবত নিয়ে উপস্থিত এক বালিকা। মৃনাল কাকলি কে জিজ্ঞাসা করলো তোর কাকুর মেয়ে নাকি? কাকলির উত্তরে সবাই জানতে পারলো বালিকা টি কাকলির ছাত্রী, ওদের বাড়িতেই তাদের পাঁচজনের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নির্মলা তাকে নাম জিজ্ঞাসা করায় জানতে পারলো তার নাম মীনাক্ষী তবে সবাই মিনু বলে ডাকে। যেহেতু সেবিনা মিষ্টি খায় না তাই সেই ভাগ টা গিয়ে পড়লো মিনুর কপালে। প্রথমে নিতে একটু ইতস্ততঃ বোধ করলেও পরে কাকলির সায় পেয়ে সে তুলে নেয়। এই দিকে মৃনাল মিষ্টি মুখে পুরেই জিজ্ঞাসা করলো কোন ক্লাসে পড়ো মিনু উত্তর এলো অষ্টম শ্রেণীতে। যেহেতু নিজে বাংলা সাম্মানিকের ছাত্র তাই উত্তর টা বাংলায় পেয়ে খুব খুশি হলো মৃণাল। সচরাচর সবাই কে eight -এ বলতে শোনা যায়, অষ্টম কেউ বলে না।
ইতিমধ্যে কাকলিকে কে একজন ডেকে নিয়ে গেলো। কাকলির দাদা সেই ঘরের দরজার কাছ থেকেই তারাকে বলে গেল কিছুক্ষনের মধ্যে দুপুরের খাওয়ানো শুরু হয়ে যাবে তারা যেন সময় মতো খেয়ে নেয়। সারাদিন খুব মজা করলো তারা। সন্ধ্যা হতেই আত্মীয়দের ভির বাড়তে লাগলো । ততক্ষণে তারাও নতুন পোষাক পড়ে তৈরী হয়ে নিয়েছে। কাকলি তার অন্যান্য বন্ধুদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলো তাদের। তার পর জোর কদমে ছবি তোলায় পাল্লা দিতে থাকলো সবাই। আর বাইরে চলছে হিন্দি গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দুর্দান্ত নাচ। ছবি তোলায় তারাও কম যায়না, কাকলির দাদা বউদির কাছে স্টেজে উঠে সবাই একে একে ছবি তুলতে শুরু করলো। ঠিক তখনই রিমির চোখ মৃণালের দিকে ; সে নির্মলার দিকে একদৃষ্টে ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে আছে।
(চতুর্থ পর্ব প্রকাশ করা হবে আগামী ৩ জুন অর্থাৎ বুধবার)
বিমান চন্দ্র দাস
(তৃতীয় পর্ব)
পরদিন কলেজে গিয়েই মৃণাল প্রথমেই রিমিকে চুপিসারে জিজ্ঞাসা করলো - কাল রাতে আমরা সবাই ফোন রেখে দেওয়ার পর তুই নির্মলা কে ফোন করেছিলি তখন কি বলেছিলিস? রিমি উত্তর দিল, আমি বললাম মাসি ফোন করেছিলো মা আমার ফোন থেকে কথা বলছিলো তাই ব্যস্ত পেয়েছিলিস। মৃণাল সঙ্গে সঙ্গে বাহ্বা দিয়ে বললো ভালো বলেছিস। মৃণালের এই কথাটা শেষ হতে না হতেই রিমি হঠাৎ এক অদ্ভুত ধরনের ভঙ্গিমায় বললো sorry রে, আমি তোদের কোনো দিন মিথ্যা বলি না কিন্তু বলতে হলো। মৃনাল তাকে শান্তনা দিয়ে বললো sorry তো আমাকে বলা উচিত, আমার জন্য তোকে মিথ্যা বলতে হলো। রিমি আবার একটা কি বলতে গিয়ে নিজেকে থামিয়ে নিয়ে বললো বাদ দে ওসব, চল ক্লাসের সময় হয়ে গেছে।
ক্লাসে বসেই সুমন্ত মৃণালের মুখে আর মৃনাল নির্মলার মুখে এক অস্থির ভাব লক্ষ্য করলো। মৃণালের অস্থিরতার কারন তো সুমন্ত বুঝতে পারলো কিন্তু মৃণাল নির্মলার অস্থিরতার কারনটা বুঝতে পারলো না। ক্লাসের শেষে থাকতে না পেরে মৃণাল জিজ্ঞাসা করেই ফেললো, নির্মলা তোর কি কিছু হয়েছে? নির্মলা হঠাৎ অন্যমনস্কতা থেকে তড়িঘড়ি বেড়িয়ে আসার চেষ্টা করে স্বাভাবিক ভাবেই বললো কই নাতো , কি হবে? মৃণাল বললো তোর হাব ভাব কেমন লাগছে। অন্যান্য দিনের মতো স্বতস্ফূর্ত লাগছে না। নির্মলা কথাটা এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করে বললো ও কিছু না রে, কাল রাতে ফোনে কথা বলতে বলতে বাড়ির লোকের সঙ্গে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছে তাই আর কি। ছাড়তো ওসব, কথা কাল মতিঝিলে তুই কতগুলো ছবি তুলেছিলিস কই দ্যাখা দেখি। প্রত্যুত্তরে মৃনাল বললো হ্যাঁ দেখাচ্ছি , ততক্ষণ তোর গুলোও দেখি, তোর ফোনটা দে আমাকে । এই বলে তারা সবাই একে অপরের ফোন নিয়ে ছবি দেখতে থাকলো। তার মধ্যেই হঠাৎ করে সেবিনা বলে উঠলো কাকলি তোর দাদার বিয়ের তারিখ ঠিক হয়েছে? কাকলি উত্তরে বললো হ্যাঁ রে, কিছুদিনের মধ্যেই নেমন্তন্ন পেয়ে যাবি। পাশ থেকে মুচকি হেসে সুমন্তর মন্তব্য নেমন্তন্নের দরকার নেই এমনি চলে যাবো। এই কথা শুনে অনেক্ষন পর সবার মুখে হাসি দেখা গেলো।
রীতিমতো কিছুদিনের মধ্যেই সবার বাড়ি নিমন্ত্রণ পত্র পৌঁছে গেলো। কারো কোনো সমস্যা ছিল না তবে নির্মলা আর সেবিনাকে নিয়ে চিন্তিত ছিল সবাই। বাইরে রাত কাটাতে হবে শুনে হয়তো আসতেই দেবে না ওদের বাড়ি থেকে। কিন্তু কাকলিও সেই ব্যবস্থা আগে থেকেই করে রেখেছে। কাকলি নিজে নয় তার দাদাকে দিয়ে ওদের দুজনের বাড়িতে ফোন করিয়ে রাজি করালো। তাদের বাড়ি থেকে কোনো আপত্তি আসার আগেই সমস্ত ব্যবস্থাপনার কথা জানিয়ে দেয় কাকলির দাদা। তাদের জন্য একটি আলাদা বাড়িতে আলাদা ঘরে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে, কোনো অসুবিধা হবে না, এসব কাকুতি মিনুতি করার পর দুজনের পরিবারই রাজী হয়।
সময়মতো সবাই বিয়ের বৌভাতের দিন সকাল এগারোটায় কাকলির বাড়িতে হাজির। সবাইকে দেখে কাকলির মনে কি আনন্দ। তারা ছয়জন এক জায়গায় হতেই একটা হই-হট্টগোল বেঁধে গেল, চেঁচামেচি, নাচানাচি, হাঁসাহাঁসি পুরো বাড়ি মাথায় করে তুললো তারা। সবার নজর তাদের দিকেই, সবার মনে জিজ্ঞাসার ভাব ছেলেমেয়ে গুলো কে? কাকলির মা তো বলেই দিলো এতক্ষণে বাড়িতে বিয়ে বিয়ে মানাচ্ছে। কাকলির দাদা সুমন্তকে আগে থেকেই চিনতো ; একটি ঘরের দিকে ইশারা করে বললো আয় ভাই তোরা সবাই এঘরে এসে বোস। কাকলি বললো চল সবাই হাত-মুখ ধুয়ে নে তার পর জমিয়ে মজা হবে। পাশে থেকে কাকলির বাবার মন্তব্য এতো দূর থেকে সবাই এলো আগে কিছু খেতে দে তার পর মজা। সেবিনা বললো আসতে আসতেই আমাদের এতো খাতির ভাবায় যায় না! কাকলির হাসতে হাসতে জবাব এলো তোরা কার বন্ধু দেখতে হবে তো। নির্মলা বললো হ্যাঁ জানি এবাড়ির মহারানীর। রিমি হালকা হেসে নির্মলার কথাটায় আরো একটা বিশেষণ যোগ করে দিলো, শুধু মহারানী নয় রে আদুরে মহারানী। এর পর সবাই হাত-মুখ ধুয়ে এসে ঘরে বসতেই সবার জন্য প্লেটে মিষ্টি, দই, পাঁপড় ভাজা আর গ্লাসে সরবত নিয়ে উপস্থিত এক বালিকা। মৃনাল কাকলি কে জিজ্ঞাসা করলো তোর কাকুর মেয়ে নাকি? কাকলির উত্তরে সবাই জানতে পারলো বালিকা টি কাকলির ছাত্রী, ওদের বাড়িতেই তাদের পাঁচজনের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নির্মলা তাকে নাম জিজ্ঞাসা করায় জানতে পারলো তার নাম মীনাক্ষী তবে সবাই মিনু বলে ডাকে। যেহেতু সেবিনা মিষ্টি খায় না তাই সেই ভাগ টা গিয়ে পড়লো মিনুর কপালে। প্রথমে নিতে একটু ইতস্ততঃ বোধ করলেও পরে কাকলির সায় পেয়ে সে তুলে নেয়। এই দিকে মৃনাল মিষ্টি মুখে পুরেই জিজ্ঞাসা করলো কোন ক্লাসে পড়ো মিনু উত্তর এলো অষ্টম শ্রেণীতে। যেহেতু নিজে বাংলা সাম্মানিকের ছাত্র তাই উত্তর টা বাংলায় পেয়ে খুব খুশি হলো মৃণাল। সচরাচর সবাই কে eight -এ বলতে শোনা যায়, অষ্টম কেউ বলে না।
ইতিমধ্যে কাকলিকে কে একজন ডেকে নিয়ে গেলো। কাকলির দাদা সেই ঘরের দরজার কাছ থেকেই তারাকে বলে গেল কিছুক্ষনের মধ্যে দুপুরের খাওয়ানো শুরু হয়ে যাবে তারা যেন সময় মতো খেয়ে নেয়। সারাদিন খুব মজা করলো তারা। সন্ধ্যা হতেই আত্মীয়দের ভির বাড়তে লাগলো । ততক্ষণে তারাও নতুন পোষাক পড়ে তৈরী হয়ে নিয়েছে। কাকলি তার অন্যান্য বন্ধুদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলো তাদের। তার পর জোর কদমে ছবি তোলায় পাল্লা দিতে থাকলো সবাই। আর বাইরে চলছে হিন্দি গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দুর্দান্ত নাচ। ছবি তোলায় তারাও কম যায়না, কাকলির দাদা বউদির কাছে স্টেজে উঠে সবাই একে একে ছবি তুলতে শুরু করলো। ঠিক তখনই রিমির চোখ মৃণালের দিকে ; সে নির্মলার দিকে একদৃষ্টে ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে আছে।
(চতুর্থ পর্ব প্রকাশ করা হবে আগামী ৩ জুন অর্থাৎ বুধবার)
সত্যিই খুব সুন্দর
ReplyDelete