Saturday, June 6, 2020

গল্প- নির্মলা পঞ্চম পর্ব

                          গল্প- নির্মলা 
                                   বিমান চন্দ্র দাস 
                            পঞ্চম পর্ব  

মৃণাল বেশ কিছুদিন ধরে নির্মলার মধ্যে একটা অস্বস্তি বোধ লক্ষ্য করছিল, যটা দিন দিন বেড়েই চলেছে ।একদিন কলেজে আলাদা ভাবে তাকে জিজ্ঞেস করলো মৃণাল, আচ্ছা তোর কি কিছু হয়েছে? কদিন থেকেই তোর মধ্যে একটা পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। নির্মলা প্রত্যুত্তরে কিছু একটা বলতে গিয়েও আটকে নিলো, বললো সেরকম কিছু না রে। মৃণাল তখন আর জোর করলো না। রাতে হঠাৎ মৃণালের চঞ্চলতা বেড়ে যায়। নির্মলার ঐরূপ আচরনের কারন জানার আগ্রহ চরম সীমায় পৌঁছায়। তাই সে আর থাকতে না পেরে ফোন করলো নির্মলাকে। বেশ কিছুক্ষন ফোন বেজেই যাচ্ছে কিন্তু ধরছে না, প্রায় কেটে যাবার মুহূর্তে ফোনটা ধরলো। ভারাক্রান্ত গলায় আওয়াজ এলো হ্যাঁ বল। মৃণাল বলতে যাবে এত দেরী কেন ফোন ধরতে, কিন্তু বলতে গিয়ে থেমে গেল সে। পরিবর্তে জিজ্ঞাসা করলো তুই কাঁদছিলি? একথা শুনে নির্মলা আবার অঝোরে কাঁদতে লাগলো। কি হয়েছে জানতে চাইবে নাকি তাকে শান্তনা দিবে বুঝে উঠতে পারছিলো না মৃণাল। কিছুক্ষণ পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হলো দুজনেই। নির্মলা বুঝতে পারলো তার কান্না শুনে মৃণালের ও গলার আওয়াজ টা ভারী হয়ে এসেছে। নির্মলা বললো সেরকম কিছু হয়নি রে এর জন্য আবার তুই কাঁদছিস কেন? তার জবাবে মৃনাল বললো হ্যাঁ সত্যি তো সেরকম কিছুই তো হয়নি সেই জন্য তখন থেকে তোর কান্না থামছে না। সেরকম কিছু হয়েছে নাকি সেরকম কিছু হয়নি সেটা বলবি তাহলে তো বুঝবো। নির্মলাও আর না বলে থাকতে পারলো না। বলতে শুরু করলো সে, - দ্বিতীয় বর্ষের পর থেকেই বাড়ি থেকে মাঝে মাঝে ফোন করে জানাতো, বিয়ের জন্য ভালো পাত্রের খোঁজ এসেছে। কবে বলে ছেলে এই চাকরি করে কবে বলে ওই চাকরি করে। এসবের জন্য আমি বিরক্ত হয়ে যেতাম। একদিন রাগ করে বাবাকে বলেছিলাম ঠিক আছে আমি আর পড়াশোনা করবো না, আমি কালই চলে আসছি দিয়ে দাও আমার বিয়ে। সেই ঘটনার পর কিছুদিন এই সব কান্ড-কারখানা বন্ধ ছিলো। বাড়ি থেকে ফোন আসলেও বিয়ের জন্য কিছু বলতো না। কিন্তু কাল মা যেই কথা গুলো ফোনে বললো সেগুলো শোনার পর আমার কিছু ভালো লাগছে না রে। এই কথাটা বলতে বলতেই নির্মলার চোখ দুটো আবার কান্নায় ভরে উঠলো। মৃনাল আবার শান্ত করলো তাকে। তার মা এমন কি কথা বলেছে জানতে চাইলো মৃনাল। নির্মলা আবার বলতে শুরু করলো, বললো তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার পরই নাকি আমাকে ভাগলপুর নিয়ে চলে যাবে, আমি আর তোদের সঙ্গে থাকতে পারবো না রে। কথাটা বলা মাত্র আবার অঝোরে কাঁদতে লাগলো নির্মলা। এই বারে মৃণালের মুখ থেকেও কোনো কথা বেরোলোনা। কিছুক্ষন পর কাঁদতে কাঁদতেই পুনরায় বলা শুরু করলো নির্মলা, মা বলছিলো বাবা নাকি বাড়িতে খুব বকাবকি করেছে। বলেছে এতদিন কিছু বলিনি কিন্তু আর না এবার যে সমন্ধ টা এসেছে এরকম আর কোনোদিন পাবো না তাই তোমার মেয়েকে বলো ফাইনাল পরীক্ষার পরই বাড়ি চলে আসতে। আর মামার বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করতে হবে না, যদি পড়ার ইচ্ছা থাকে তাহলে বিয়ের পর  ঐ বাড়ি থেকে পড়বে। তারা তো বলেছে বিয়ের পর পড়াতে তাদের কোনো আপত্তি নেই। এতো কিছু শোনার পরও এখনও কিছু বলছে না মৃণাল, তবে নির্মলা বুঝতে পারছে যে সেও কাঁদছে। নির্মলা আরো বলতে থাকলো, তোকে এগুলো কলেজে বলিনি বলতে শুরু করলে কান্না থামাতে পারতাম না। এই রকম অবস্থাতেও আমি কিভাবে সবার সামনে এতো হাসি-খুশি থাকি আমি জানি। কথা বলতে বলতেই নির্মলা বলে উঠলো তুই লাইনে আছিস তো? মৃণালের দিক থেকে উত্তর এলো হ্যাঁ। আসলে ফাইনাল পরীক্ষার পর তারা আর একসঙ্গে থাকবে না একথা শুনে দিশেহারা হয়ে গেছে মৃণাল, কি বলবে কিছু বুঝে উঠতে পারছিলো না সে। হঠাৎ করে নির্মলা বলে উঠলো, দেখেছিস কি পাগলি আমি, তখন থেকে তোর পড়াশোনা নষ্ট করে বকবক করেই যাচ্ছি।  এবার মৃনালের মুখ ফুটলো, আরে না না, তুই বল আমি ঠিক পরে পড়ে নিবো। তারপর সে মনে মনে বিড়বিড় করে বললো আমি তো চাই তুই সারাজীবন আমাকেই সবকিছু বল, কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। নির্মলা জিজ্ঞাসা করলো কিছু বললি? মৃণাল বললো হ্যাঁ, বললাম যে বন্ধুদের ই যদি এসব না বলিস তো কাকে বলবি। নির্মলা অবাক হয়ে বললো বন্ধু! শুধু বন্ধু! তুই আমাকে শুধু বন্ধু ভাবিস? একথা শুনে মৃণাল হতবাক। সে বুঝে উঠতে পারছিলো না নির্মলা কি বলতে চাইছে। তার পরেই নির্মলা আবার বললো তুই আমাকে শুধু বন্ধু ভাবিস? আমি তো ভাবতাম সবার থেকে প্রিয় বন্ধু ভাবিস। একথা শুনে একটু স্বস্তি পেলো মৃণাল। সে তো এক মুহূর্তের জন্য ভেবে নিয়েছিলো নির্মলা হয়তো তার সব মনের কথা জেনে গেছে। এর পর মৃণাল উত্তর দিল শুধু প্রিয় বন্ধু নয় রে, তুই যে আমার কে সেটা তুই নিজেও জানিস না। নির্মলা অবাক হয়ে বললো মানে? পরোক্ষনেই মৃণাল বলে উঠলো আমাদের বন্ধুত্বটা প্রিয় বন্ধুর থেকেও বেশি কিছু। যেই সম্পর্কের এখোনো কোনো নামকরন হয়নি এই পৃথিবীতে। হ্যাঁ আমরা বন্ধু ঠিকই, তবে তার মধ্যেও নাম না জানা এক অন্তরঙ্গ সম্পর্ক লুকিয়ে আছে আমাদের মধ্যে। নির্মলা বললো হ্যাঁ ঠিক বলেছিস, তাই হয়তো আজ আমার এই ঘটনা গুলো তোকেই বললাম। 
যাই হোক, অনেক্ষন কথা হলো এবার ফোন রাখছি। মৃনাল বললো হ্যাঁ রাখ তবে কথা দে কাল কলেজ আসা পর্যন্ত একবারও কাঁদবিনা। নির্মলা বললো আর যদি কাঁদি? প্রত্তুতরে মৃণাল বললো যদি কাঁদিস তাহলে কাল কলেজে এসে আবার তোকে মেরে কাঁদাবো। একথা টা শুনে এতো মন খারাপের মধ্যেও নির্মলা একটু হেঁসে বললো ঠিক আছে কাঁদবোনা। এই বলে ফোনটা রাখলো দুজনেই। ফোন রাখার শেষ মুহূর্তে নির্মলা কে একটু হাসাতে পেরে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো মৃণাল। 

    (ষষ্ঠ পর্ব প্রকাশ করা হবে ৯ জুন অর্থাৎ মঙ্গলবার)

2 comments:

  1. Ektu besi kre post kr....ektu portei ses hoye ja66e....suspence a thak6i khub.....2 to porber golpo akta te pele valo hoto......

    ReplyDelete
    Replies
    1. Dhonnobaad comment kore poramorsho ta deoar jonno. Bapar ta vebe dekhchi.

      Delete