Tuesday, June 9, 2020

গল্প- নির্মলা, ষষ্ঠ পর্ব

                  গল্প- নির্মলা
                          বিমান চন্দ্র দাস
                      ষষ্ঠ পর্ব

সব কিছু স্বাভাবিক চলছিল। হাসি-কান্না, রাগারাগি, মজা, আড্ডা, সুখ-দুঃখ সব মিলিয়ে ভালোই কাটছিল সবার। তবে তার মধ্যে মৃণাল আর নির্মলার সম্পর্কটা গভীর থেকে আরো গভীরে যাচ্ছিলো। মৃণাল শত চেষ্টার পরও নির্মলার থেকে দূরে থাকতে পারছিল না। আর নির্মলাও দিন দিন মৃণালের কাছাকাছি আসতে শুরু করেছিল। সেদিন ছিল কলেজের বসন্ত উৎসব, হলুদ শাড়ী পরিহিতা কপালে টিপ ও দুই গালে ও কপালের টিপের পাশে আলতো করে তিরঙ্গাকারে রঙ্ লাগানো। এই রূপ মোহমাখা রূপবতী কন্যাটির দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছিল না মৃণাল।  সেই কন্যাটি আর কেউ না নির্মলা নিজেই। ঠিক যেন স্বর্গ থেকে আগত অপ্সরা মনে হচ্ছিল। পাশ থেকে সুমন্ত মৃণালের কানের কাছাকাছি তার মুখটা নিয়ে গিয়ে বললো এই ভাবে কি দেখছো বৎস?  একটু অন্য দিকেও ঘুরে তাকাও। মৃণাল বললো দেখতে দে রে, আর যে এই দিনটা ফিরে পাবো না, তাই স্মৃতি গুলোই মনে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকবো। কথাটা শুনে সুমন্তর মনটা যেন কেমন হয়ে গেল, সে সত্যি এটা ভাবেনি যে এটাই তাদের কলেজ জীবনের শেষ বসন্ত উৎসব। সেবিনা ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছিল, সে সুমন্তর কাছে এসে বললো কিরে আজকের দিনে তোকে হঠাৎ মনমরা দেখাচ্ছে কেন? সুমন্ত বললো তুই কি ভেবছিস এটাই আমাদের কলেজ জীবনের শেষ বসন্ত উৎসব। সেবিনা বললো হ্যাঁ জানি, বাড়িতে এটা নিয়ে অনেক ভেবেছি,  ভাবতে ভবতে চোখের জলও বেরিয়েছে কয়েক ফোটা, কিন্তু এই মুহূর্তে সেগুলো ভেবে আজকের দিনটা বৃথা যেতে দিবো না। এমন ভাবে উপভোগ কর যাতে এই দিনটা সারাজীবন স্মৃতির পাতায় উজ্জ্বল হয়ে ভেসে ওঠে। পাশ থেকে নির্মলা শুনতে পেলো কথাটা। এগিয়ে এসে সেবিনার কথায় সেও সহমত জানালো। তার পর সবাই মত্ত হয়ে উঠলো রঙের খেলায়।  কারো গালে রঙ, কারো কপালে রঙ তো কারো আবার মনে রঙ। হ্যাঁ মৃনালের মনে এতো রঙ জমেছে যে তার একবার ইচ্ছা হলো নির্মলা কে পাশে ডেকে পরিনীতা সিনেমার বাবাই দার মতো তার সিঁথিতে এক মুঠো আবির ভরে দিবে, কিন্তু যাই হোক পরক্ষোনেই নিজেকে সংযত করলো সে। সবাই সবাই কে রঙে রাঙিয়ে দিচ্ছে তার মধ্যেই কাকলি মৃণালের কাছে এসে বললো বল কি হয়েছে? মৃণাল কিছু বুঝতে না পেরে বললো কই কি হয়েছে! কাকলি মুচকি হেসে বললো তোর আবিরের হাতের মুঠোর কাপুনি নির্মলার দিকে তাকিয়ে তোর চোখের মধ্যে একটা ভয়ের আভাস এগুলোই প্রমান করে দিচ্ছে তুই ওকে নিয়েই ভাবছিস। মৃণাল প্রত্তুতরে বললো ও কিছু না রে, কয়েক সেকেন্ডের জন্য বাবাই দা হবার শখ জেগেছিল মনে তারপর নিজেকে সামলে নিলাম। কাকলি ব্যাঙ্গাত্মক ভঙ্গিমায় বলে উঠলো ও লে লে লে তাই নাকি ছেলের কি শখ। মৃণাল তাকে চুপ করতে বললো, তোকে বললাম বলে তুই আবার হাটে হাঁড়ি ভাঙ্গিস না। নির্মলার দিকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বললো ঐ দ্যাখ বেশী দূরে নাই শুনতে পাবে। ইতিমধ্যে রিমি আর সেবিনা তাদের কথোপকথনের মধ্যে হাজির। কাকলি বললো সে শুনতে পাক তবু তোর ইচ্ছা পূরণ করবোই। রিমি বললো কিসের ইচ্ছা রে ? কাকলি হাসতে হাসতে বললো এখানে এখন পরিনীতা সিনেমার বাবাই দার মেহুলের সিঁথিতে আবির ভরে দেওয়ার দৃশ্য টি অভিনয় করে দেখানো হবে, তবে চরিত্রের পরিবর্তন হবে, আমি হবো বাবাই দা আর মৃণাল হবে মেহুল। একথা শুনে সেবিনা আর রিমির সে কি হাসি। এত কিছুর মধ্যেও মৃণালের নির্মলার দিকে ঘুরে ঘুরে তাকানো একটুও কমলো না। সত্যি তারা দিনটিকে এমনভাবে উপভোগ করলো সারা জীবন স্বরণীয় হয়ে থাকবে। সেদিন বাড়ি ফেরার পথে সবার মন খারাপ কারন এই রকম দিন আর কোনোদিন ফিরে আসবে না। কিন্তু পরীক্ষার পড়ার চাপে সব যেন কেমন এলো মেলো হয়ে যাচ্ছে । পরীক্ষা আরম্ভ হয়ে গেছে তাই কিছু দিন থেকে ফোনে কারো সঙ্গে সেরকম ভাবে কথা হয়ে ওঠে না। যেটুকু হয় তা পড়ার বিষয়েই হয়। অবশেষে সেই দিনটি এসে উপস্থিত হতে চলেছে যেই দিনের আশা কোনো ছাত্র ছাত্রী -ই করে না । কিন্তু বিধির বিধান তো আর কেউ পাল্টাতে পারে না ।

(পাঠক বন্ধুদের অনুরোধের কথা মাথায় রেখে আগামী ১০ ও ১১-ই জুন অর্থাৎ বুধবার ও বৃহষ্পতিবার পর পর দুই দিনে দুটি পর্ব  প্রকাশ করা হবে।)

No comments:

Post a Comment