গল্প - নির্মলা
বিমান চন্দ্র দাস
চতুর্থ পর্ব
রাত তখন ১ টা বাজে অনেক আত্মীয় খাওয়া দাওয়া সেরে ইতিমধ্যে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছে, তাই বিয়ে বাড়ি অনেকটা শান্ত হয়ে এসেছে। আমাদের চোখেও ঘুম নামক রাত টি কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসছে, তা কাকলী বুঝতে পেরে বললো একটু অপেক্ষা কর বাবাকে বলছি তোরাকে রেখে আসছে। মৃণাল বললো না না তার দরকার নেই মিনু আছে তো, ওর সঙ্গে চলে যাবো আমরা। রিমি জিজ্ঞাসা করলো কতক্ষণ লাগবে যেতে? কাকলি উত্তর দিলো তিন থেকে চার মিনিট। প্রত্তুতরে সেবিনা বললো তাহলে আমার চলে যাচ্ছি আর কাউকে পাঠাতে হবে না।
রাস্তার এক মোড়ে এত রাতে কয়েকজনের মিশ্র কন্ঠে গল্পের শব্দ এলো, একটু এগোতেই দেখে চার জন লোক এক গাছতলায় বসে মদ্যপান করছে। নির্মলা বলে উঠলো এই তো দেশের রোগ, এত রাতে কি এদের চোখে ঘুম থাকে না? বাড়ির লোকও কি কিছু বলে না এদের ? সেবিনা বললো এদের জন্যই তো আমাদের দেশে মেয়েরা সন্ধ্যা লাগলেই বাড়ির বাইরে বেরোতে ভয় পায়। মিনু ভয়ে ঢোক গিলে বলে উঠলো আমার খুব ভয় করছে। সুমন্ত বললো ধুর পাগলি ভয় কিসের, ওরা তো চার জন আর আমরা ছয় জন, কিছু বলতে এলেই সিনেমার নায়কদের মতো মেরে উড়িয়ে দিবো। এই ভাবে মিনুকে শান্তনা দিলো সুমন্ত। তার মধ্যেই রিমি বললো আমরা সবাই কে হাত লাগাতেই হবে না মৃণাল যা ক্যরাটে জানে তাতে ও একাই যথেষ্ট। নির্মলা অবাক হয়ে বলে উঠলো তাই নাকি মৃণাল, আমি জানতাম না তো! মৃণাল বললো হ্যাঁ ওই একটু আধটু আর কি। মৃণালের কথা শেষ হতে না হতেই সেবিনা বললো না রে একটু আধটু নয়, ও দারুন ক্যারাটে জানে, আমি ওর ফোনে ভিডিও রেকর্ডিং দেখেছি। এই শুনে নির্মলা বললো তোর মধ্যে আর কি কি প্রতিভা আছে একদিন ফর্দ বানিয়ে দিস তো। কবিতা লিখিস, গল্প লিখিস, ক্যারাটে জানিস আবার ছেলে হয়ে সব রান্নাও জানিস! উফ্ , সত্যি ভাবা যায় না। এই সব গল্প করতে করতেই মিনুদের বাড়ি পৌঁছে গেলো তারা।
দরজা খুলতেই দেখে এক বৃদ্ধ, অবশ্য বৃদ্ধ বলা ভুল হবে কারন বয়স একটু বেশী থাকলেও দেখে বোঝার উপায় নেই, এমনই সুঠাম দেহ তার। মৃনাল বললো নমস্কার আমরা কাকলির বন্ধু। সেই সুঠাম দেহ বিশিষ্ট ব্যক্তিটি উত্তর দিলো হ্যাঁ এসো এসো তোমাদের জন্যই বসে আছি, আমি মিনুর দাদু। মিনু কে নির্দেশ দিলো তার দাদু, 'মিনু যা বাথরুম টা দেখিয়ে দে, ওরা হাত-মুখ ধুয়ে নিক। ' যেমনি বলা তেমনি কাজ। তারা হাত-মুখ ধুয়ে আসতেই মিনুর দাদু তাদের ঘর দেখিয়ে দিলো। পাশাপাশি দুটি ঘরে তাদের জন্য আগে থেকেই খুব সুন্দর ভাবে ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে। নির্মলা মিনু কে তাদের সঙ্গে ঘুমোতে বললো। তাদের ঘুমোতে রাত প্রায় দুটো পেরিয়ে যায়।
সকালে সবাই উঠে একে একে ফ্রেশ হয়ে আসতেই দেখা যায় বারান্দায় সবার জন্য চেয়ার সাজিয়ে রাখা আছে আর পাশে একটা চেয়ারে মিনুর দাদু বসে। সবাই এসে বসা মাত্র মিনু আর এক বৃদ্ধ মহিলা চা বিস্কুট নিয়ে এলো। পরোক্ষনেই জানা গেল উনি মিনুর ঠাম্মি। মিনুর মা- বাবা গেছে ব্যাঙ্গালোর ডাক্তার দেখাতে। দিন তিনেকের মধ্যেই ফিরবে বলে জানালেন দাদু। আর মিনুর এক দিদি আছে হোস্টেলে থাকে, দেয়ালের দিকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে দেখালো -এই তার ছবি। এইভাবে দাদুর সঙ্গে চললো কিছুক্ষন গল্প। জানা গেল দাদু ভারতীয় সেনাবাহিনী তে থেকে ১৩ বছর দেশের সেবা করেছেন। এটা শোনার পর মৃণাল বুঝতে পারলো ওনার দেহের গঠনের আসল রহস্য। সকাল প্রায় আটটা নাগাদ মিনু দের বাড়ি থেকে বেরিয়ে পৌঁছায় কাকলি দের বাড়ি আর সেখান থেকে প্রায় ন'টা নাগাদ বেড়িয়ে পরে বাড়ির পথে। পরের দিন থেকে আবার কলেজ আর পড়াশোনা। তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার দিন কাছিয়ে আসছে, তাই দিন দিন পড়ার চাপ ও বাড়ছে সবার তবুও দু-এক দিন পর পর সবাই ২০-২৫ মিনিট করে কনফারেন্স কল-এর এর জন্য সময় বের করে নেয় তারা।
(পঞ্চম পর্ব প্রকাশ করা হবে ৬ ই জুন অর্থাৎ শনিবার)
No comments:
Post a Comment