বিমান চন্দ্র দাস
সপ্তম পর্ব
আর একটাই পরীক্ষা বাকি ছিল, তার পর হয়তো কে কোথায় হারিয়ে যাবে ঠিক নেই। কয়েকদিন থেকেই কারো মনে স্ফূর্তি নেই, সবার মনমরা। নির্মলা তো কেঁদেই ফেলে যখন-তখন। যখনই তার মনে আসে পরীক্ষার পর তাকে চলে যেতে হবে ভাগলপুর তখনই সে আর চোখের জল থামিয়ে রাখতে পারে না। আসলে তারা এমন একটা বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেছে যে কেউ কাউকে ছাড়া থাকতে চায় না। অগত্যা সবাই মুখোমুখি হলো সেই দিনটার। হ্যাঁ আজ শেষ পরীক্ষা। শুধু তারা ছয়জনই নয় সকল ছাত্রছাত্রী রা নিজ নিজ পরীক্ষা কক্ষ থেকে বেড়িয়ে নিজ নিজ প্রিয় মানুষটির কাছে হাজির। সবার মুখে পরীক্ষা শেষ হবার স্বস্তির থেকে বন্ধু দের থেকে দূর হবার কষ্টটায় বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেকেই একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে, এই দৃশ্য যে কতটা করুন সেটা শুধুমাত্র তারাই বুঝতে পারবে যারা বাস্তবে এই ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্না, আলিঙ্গন, তার মাঝেই কিছু সেলফি নেওয়া, সত্যি অদ্ভুত ও কষ্টকর অভিজ্ঞতা এটি।সেবিনা বললো চল আমরাও একটা গ্রুপ সেলফি নি, কথা মতো সঙ্গে সঙ্গে কাজও সম্পন্ন হলো। কারো স্বাভাবিক কন্ঠে কথা বেরোচ্ছিলো না, সবার গলায় কান্নার আভাস। সত্যি এই স্কুল আর কলেজ জীবনটা বড়োই বিচিত্র। ছেলেবেলায় এই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে না হয় সেই জন্য কাঁদতে হতো, আর বড়ো হয়ে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বেড়িয়ে যেতে হচ্ছে তাই কাঁদতে হচ্ছে।
সেদিন বাড়ি এসেও মন ভালো নেই কারো। রাত ১০.৩০ নাগাদ কনফারেন্স কল করলো রিমি, সেদিন প্রায় ৩ ঘন্টার ও বেশি সময় কথা হয়েছিল তাদের। কথার মাঝে কাকলি রেগে গিয়ে বললো সেই কলেজ থেকে তোরা এমন নাকি কান্না শুরু করেছিস মনে হচ্ছে আমাদের আর কোনো দিন কথা হবে না, আমরা তো হারিয়ে যাচ্ছি না, সবাই সংস্পর্শে থাকবো। তোরা সবাই যদি একই রকম ভাবে মন খারাপ করে বসে থাকিস তাহলে কি ভালো লাগে বলতো? নির্মলা বললো ঠিক বলেছিস, তাহলে আমি তোদের মনটা একটু ভালো করে দি কেমন। কাকলি জিজ্ঞাসা করলো কিভাবে। নির্মলা বললো একটা খুশির খবর আছে, আমরা সবাই কাঠগোলা বাগান বাড়ি বেড়াতে যাচ্ছি। একথা শুনে সবার গলার আওয়াজ টা পাল্টে গেল। নির্মলা আরো বলতে থাকলো, আমি বিকেলে বাড়িতে ফোন করেছিলাম তার পর বলি যে আমি এখন কয়েকদিন বাড়ি যাচ্ছি না, সামনে ২৭ তারিখে আমার জন্মদিন টা এখানেই বন্ধুদের সঙ্গে কাটাতে চায়। আর সেকথায় বাড়ি থেকে রাজি হয়েছে। রিমি বললো আরে তাই তো আজ তো ২১ তারিখ হয়ে গেল আর ৬ দিন পরেই তো তোর জন্মদিন। একথা শুনে একটু হলেও সবার মন ভালো হলো।
এই কটা দিন কোনো রকমে দিন কাটিয়ে এলো সেই দিন । সবাই সকাল সকাল তৈরী হয়ে বেড়িয়ে পড়লো লালবাগের সেই ঐতিহাসিক স্থানটির দিকে, যেখানে শুধু মুর্শিদাবাদ নয় লুকিয়ে আছে পুরো ভারতবর্ষের তথা বিশ্বের অজানা ইতিহাস ।
(অষ্টম পর্ব টি কাল প্রকাশ করা হবে এবং নবম অর্থাৎ অন্তিম বা শেষ পর্ব টি প্রকাশ করা হবে ১৪ ই জুন ।)
![]() |
Kathgola Bagan Bari Lalbag,Murshidabad |
No comments:
Post a Comment